মহুয়া রায়চৌধুরী লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
মহুয়া রায়চৌধুরী লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

মহুয়া রায়চৌধুরীর কথা বললেন অভিনেত্রী দেবিকা মুখোপাধ্যায়

 মহুয়ার ডাগর-ডোগর মুখটা ক্লোজ আপে কী মিষ্টি লাগত! মহুয়ার রূপে কোনও উগ্রতা ছিল না। গায়ের রং কিন্তু শ্যামলা।  মহুয়ার খুব সাধারণ মধ্যবিত্ত মানসিকতার চেহারা ছিল কিন্তু ক্যামেরার সামনে গ্ল্যামার নিয়ে আসত। এক সাক্ষাৎকারে, দেবিকা মহুয়া সম্পর্কে এই কথাগুলো বলেছিলেন


মহুয়া রায়চৌধুরীর ৪০ তম প্রয়াণ বার্ষিকীতে তাঁর কথা বললেন অভিনেত্রী দেবিকা মুখোপাধ্যায়। ৪০ বছর পর এই প্রথম মহুয়াকে নিয়ে মুখ খুললেন 'ছোট বৌ' দেবিকা। 

মহুয়ার সঙ্গে দেবিকা বললেই তো মনে পড়ে 'আবির' ছবির কথা। যে ছবি মহুয়ার মৃত্যুর দু বছর পর রিলিজ করেছিল। একটু গল্প বলুন না?


আমাকে আগে কেউ কোনওদিন জিজ্ঞেসও করেননি এই বিষয়ে। অথচ মহুয়া আর আমি সহকর্মী ছিলাম এই ইন্ডাস্ট্রিতে।

'আবির' ছবির অফার নিয়ে কিন্তু পরিচালক কাজল মজুমদার মহুয়া মারা যাবার  আমার কাছে এসেছিলেন। মহুয়ার সঙ্গে আমি এই ছবিতে কোনও শুটিং করিনি। কারণ ছবিটা যখন শুরু হয় আমি কোনও গল্পেই ছিলাম না। মহুয়া ছবিটা শেষ করে যেতে পারেনি। তখন ছবিটা শেষ করতে পরিচালক গল্পে আর একটি নায়িকা চরিত্র আমাকে নিয়ে এলেন। 'আবির' ছবিতে দেখা যায় আমার আর মহুয়ার একসঙ্গে দৃশ্য, বেশ কয়েকটা। কিন্তু ওগুলো সব সুচতুর এডিটিং। মহুয়া মারা যাবার পর তো ডিরেক্টর আমায় এই ছবির অফার দেন। আমি এই ছবিতে মহুয়ার সঙ্গে শুটিং করিনি। সেটা দর্শকরা ধরতে পারবেন না। 'আবির' ছবিটা ভালই চলেছিল। অল্প টাকার ছবি, আমরাও তো বেশি টাকা পাইনি সেসময়। কিন্তু চলেছিল। এই ছবিতে মাদ্রাজের একটা বিখ্যাত ট্রেনড কুকুর 'মোতি' ছিল। সে হিন্দি সিনেমাও অনেক করেছিল। যাকে দেখেতেও 'আবির' ছবিটা জনপ্রিয় হয়েছিল।

মহুয়ার সঙ্গে আর কোনও ছবিতে আপনি কাজ করেছিলেন?

হ্যাঁ তপন সিনহার 'রাজা'। একই ছবিতে আমরা দু'জন ছিলাম। তপন সিনহার সঙ্গে কাজ করা আমার কাছে একটা স্মরণীয় অভিজ্ঞতা। তার আগে 'বাঞ্ছারামের বাগান', 'আদালত ও একটি মেয়ে' করেছি। তবে তপনদার আর একটা ছবিতে আমি হিরোইন ছিলাম। যে রোলটা হিন্দিতে মহুয়া করেছিল। 'আদমি অউর অউরাত' ছবিতে অমল পালেকর আর মহুয়া রায়চৌধুরী ছিল। এই হিন্দি ছবিটার গল্প নিয়ে একটা বাংলা ছবিও হয়েছিল 'মানুষ'। মহুয়ার রোলটা আমি করি আর আমার বিপরীতে ছিলেন শমিত ভঞ্জ। মহুয়া মারা যাবার পর এই বাংলা 'মানুষ' ছবির আমার কাছে আসে। এই ছবিটা মুক্তিও পেয়েছিল পরে। কিন্তু এখন আর কোনও চর্চায় নেই। আমাকে শুধুই 'ছোট বৌ' বলা হয় চিরকাল। অথচ তপন সিনহার এতগুলো ছবি করেছি। 'মানুষ' ছবিতে হিরোইন আমি, তবু কজন আর জানল? ছবিটাই তো পাওয়া যায় না।

মহুয়া আমার থেকে একটু সিনিয়র ছিল। তবে আমার দু'জন দু'জনকে তুই করেই বলতাম। ওঁর চলে যাওয়া বড় মাপের নায়িকার প্রস্থান। ভীষণ ইমোশনাল অ্যাকট্রেস ছিল মহুয়া। গ্লিসারিন ছাড়া কাঁদতে পারত। যেটা এখন কেউ জানেই না, পারেই না। সব চোখে ড্রপ দিয়ে দিয়ে কাঁদে। নিজের বাস্তব জীবনের কষ্টটা মহুয়ার মনে পড়ত। তাই বলত 'কান্নার সিনে আমার গ্লিসারিন লাগে না'। একটা মেয়ে যখন ক্যামেরার সামনে হাউহাউ করে কাঁদতে পারে তখন তো তাঁর ভেতরের যন্ত্রনাগুলো বেরিয়ে আসে। আমিও পারতাম সেটা।আমি মহুয়াকে বলতাম 'আমার ছোটবেলায় বাবা মারা গেছে, বাবার কথা ভেবে আমি কেঁদে ফেলি'। মহুয়াও তখন বলত 'আমার জীবনেও অনেক কষ্ট আছে। সেগুলোর কথা ভেবে আমি কেঁদে ফেলি'।

ওঁর মৃত্যুর ৪০ বছর পরও অমন অভিনেত্রী আর পাওয়া যাবে না। মহুয়ার ডাগর-ডোগর মুখটা ক্লোজ আপে কী মিষ্টি লাগত! মহুয়ার রূপে কোনও উগ্রতা ছিল না। গায়ের রং কিন্তু শ্যামলা।  মহুয়ার খুব সাধারণ মধ্যবিত্ত মানসিকতার চেহারা ছিল কিন্তু ক্যামেরার সামনে গ্ল্যামার নিয়ে আসত। ক্যামেরাতে ভীষণ ( ভীষণে জোর দিলেন দেবিকা) ভাল আসত। কিন্তু খুব ঘর-গেরস্থর মেয়ে ছিল। ওঁকে সামনে দেখলে কেউ বলবে না সিনেমা আর্টিস্ট। একটু ক্ষ্যাপাও ছিল। বাইরে কোথাও রাতে শো করে এসে, স্টুডিওর বাথরুমে স্নান করে নিল। আমি বললাম, 'বাড়ি যাবি না?' বলল 'দূর বাড়ি গিয়ে আবার স্নান কে করে!' স্টুডিওটাকেই মহুয়া ওঁর ঘর সংসার ভেবে ফেলত।

আমরা সহকর্মী ছিলাম। আমার সঙ্গে ওঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিল না। রত্না দির (ঘোষাল) যেটা ছিল। কাজ করতে গিয়ে টুকটাক ব্যক্তিগত কথা যা হত। একবার টেকনিশিয়ান স্টুডিওর মেকআপ রুমের ভিতর ঢুকে দেখলাম মহুয়া মেকআপ করছে। আমিও মেকআপে বসব। ওঁর আর আমার আলাদা ছবি ছিল। কিন্তু আমরা এক মেকআপ রুম শেয়ার করছিলাম। তখন দেখি মহুয়ার মুখে মারের দাগ। ঠোঁটের কাছে রক্ত জমাট বেঁধে আছে। মুখ মার খেয়ে ফুলে রয়েছে। কাটার দাগ। মেকআপ ম্যানকে মুখের দাগগুলো ঢেকে দিতে বলছিল মহুয়া। তখন মহুয়াকে বললাম 'এই অবস্থা তোর কে করল?' বলল 'তিলক, আমার বর!' আমি বললাম তোদের এত ঝগড়া, মারপিট হয় কেন? এত মার খাবি কেন? তখন বলল 'আমি একটু বেশিই খেয়ে ফেলেছিলাম। সারাক্ষণ টাকা চায়। তাই মারপিট হয়ে যায়।' এটা তো আমি একদিনের ঘটনা বলছি, যা দেখেছিলাম। কিন্তু স্টুডিওপাড়ায় শুনতাম লোকমুখে ওঁরা স্বামী-স্ত্রী দু'জন হামেশাই মারপিট করত। আসলে বেশি জিজ্ঞেস করিনি। আমার তখন অত ম্যাচিউরিটি ছিল না। মহুয়ারও ছিল না। ব্যক্তিগত সংসার জীবন আর প্রফেশনাল জীবন এক করে ফেলত। আমি তাও ওঁকে বুঝিয়েছিলাম। কিন্তু আমার জ্ঞান সেদিন মহুয়া শোনেনি। সংসারে শান্তিটা ওঁর ছিল না। সেটা আমি ওকে দোষ দেব না। ওঁর স্বামীকেও চিনতাম না। আমি বলব আমি জানিনা। যা দেখেছিলাম সেটা খুব কষ্টের। কিন্তু আমি সবসময় ওঁর ভালটা তুলে ধরব। আমি নিজে একজন অভিনেত্রী হয়ে ওঁকে গুণী অভিনেত্রী হিসেবেই দেখব।

আমি তো গিয়েছিলাম তখন মহুয়ার এস এন রায় রোডের বাড়িতে। আমাদের ফিল্মের লোকজন অনেকেই ছিলেন। কিন্তু মহুয়ার মুখ তো ঢাকা ছিল। আগুনে পোড়া শরীর সম্পূর্ণ কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল। শবদেহটা দেখেছিলাম কিন্তু আমি তো মহুয়ার মুখ দেখতে পাইনি। সেখানে ওঁর বর, বাবা, ছেলে গোলা সবাইই ছিল। কী ভাবে আগুন লাগল আমি জানিনা। শুনেছিলাম সুইসাইড বা এতটাই অতিরিক্ত মদ্যপান করেছিল যে ছেলের দুধ গরম করতে গিয়ে কখন আগুন লেগে গিয়েছে গায়ে নিজেই বুঝতে পারেনি। ওরকম মৃতদেহর সামনে কী আর এত প্রশ্ন করা যায়! আমি কিছু জিজ্ঞেস করিনি। আমি ভাবতেই পারছিলাম না। ভগবান যাকে যখন নিয়ে নেন। ওঁর মতো অভিনেত্রী আর এল না ইন্ডাস্ট্রিতে।

নিজের সম্পর্কে মহুয়া রায়চৌধুরীর বক্তব্য

  


আমার বাবা নীলাঞ্জন রায়চৌধুরী। অভিনয়ের প্রতি তার একটা অনুরাগ ছিলই, ফিল্মের কাজকর্মের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। তিনি তাঁর নিজের জীবনে যে স্বপ্ন দেখতেন তার অনেকটাই পূরণ করতে চেয়েছিলেন আমার মধ্য দিয়ে। আর তাছাড়া বলতে কি, আমাদের সংসারের অবস্থা তখন খুব একটা ভাল ছিল না। হয়ত ভেবেছিলেন আমি সিনেমায় চান্স পেয়ে গেলে তার আর্থিক দিকেরও কিছু সুরাহা হবে। আমি তখন নাচ শিখতাম—ইচ্ছে ছিল নৃত্যশিল্পী হব। সেটা আর হল না। ফিল্মসেন্স তো দূরে থাক, আমার যখন অভিনয় সম্পর্কেই বিশেষ কিছু আগ্রহ জন্মায়নি, বাবা তখন থেকেই আমাকে সিনেমার নামাবার জন্যে উঠেপড়ে লেগেছিলেন। বলা বাহুল্য সেই সময়েই মেয়ের জনে। তাঁকে কিছু গল্পনা-লাঞ্ছনা সইতে হয়েছিল। ছেলেমানুষ হলেও সেটা বোঝার মত বয়েস আমার ছিল। যেমন ধরুন, বাবা আগেভাগে কথা বলেই কোনো পরিচালকের কাছে আমাকে নিয়ে গিয়েছেন-তো তিনি আমাকে দেখে একেবারেই বিরূপ আশাহত মন্তব্য করে বসলেন- এই আপনার ে কি হবে একে দিয়ে ভাল করে লেখাপড়া শেখান বিয়েথা দিন ইত্যাদি ।


বাবা আমার কাছে ধরা দিতে না চাইলেও লক্ষ্য করতাম প্রায় ধিকার প্ররূপ। । এইসব মন্তব্য শুনে বাবার মুখ শুকিয়ে যেত। তার কিছু নয়, সেটা দেখে আমার আত্মসম্মানে য লাগত। বাবাকে বলতাম- হ্যাঁ গো তুমি কি? আমাকে এইভাবে লোকের কাছে নিয়ে যাও, তারা আমার সঙ্গে তোমাকেও অপমান করে। চল বাড়ি চল, আমার কোনো দরকার নেই সিনেমা করবার।

কতদিন এমন হয়েছে, প্রায় কান্না এসে গেছে চোখে। বাবা কিন্তু দমতেন না, বরং আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে হাসতে হাসতে বলতেন—দূর কে কি বলল তাতেই এত চটে যেতে হয় নাকি তোর আবার এইটুকু বয়েসেই বেশি প্রেস্টিগমন। হয়ত সেটা ছিল, তাই ছোটবেলায় আমাকে সবাই ডাকত 'প্রেস্টিজ কুকার' বলে। বাবাও এই বলে খ্যাপাতেন তখন । আর বলতেন-কে তোকে ফিরিয়ে | দিল তাতেই তোর কিছু হবে না এটা ধরে আসলে তার নিজের মনের জেদটাকেই ফিরিয়ে আনার জানো। আর সেটা শেষ পর্যন্ত ফিরিয়ে আনতে পেরেছিলেন বলেই তো এই আজকের আমি জানবেন, পারিবারিক দিক থেকে এই আমি সম্পূর্ণই আমার বাবার। তার স্বপ্ন কতটা সার্থক করতে পেরেছি জানি না, তবে নিশ্চয়ই কিছুটা পেরেছি। এটা ভেবে আমার আনন্দ হয়, অন্যদিকে কখনও-সখনও একটু মন খারাপ হয় বইকি, যখন ভাবি আমার মা। মাধবীলতা রায়চৌধুরী কিন্তু আমাকে একেবারেই অন্যভাবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। আমাকে ঘিরে আমার মা-বাবার স্বপ্ন ছিল একেবারেই বিপরীতমুখী।

মা নিজে যথেষ্ট শিক্ষিতা, মহিলা হয়েও অনির্ভর, এখনও চাকরি করেন। তিনি চেয়েছিলেন আমি মন দিয়ে লেখাপড়া করি। আমার ফিল্ম লাইনে আসাটা আদৌ পছন্দ ছিল না তার। অনেকেই জানেন না, আমি খুব ছোট বয়েসে দুটি হিন্দি ছবিতে নেমেছিলাম—সেসব 'শ্রীমান পৃথ্বীরাজ'-এরও আগে। এই ছবি দুটিতে আমার নাম দেওয়া হয়েছিল বেবি সোনালি আসলে আমার নাম শিপ্রা। মেয়ের নাম সিনেমায় ব্যবহার হবে, মা এটা চাননি। আমার 'মহুয়া' নামটা তো আমার আরেক জন্মদাতার, আপনারা জানেন স্টুডিয়োর লোকজনদের কাছে, যিনি "তনুবাবু' নামে পরিচিত অর্থাৎ তরুণ মজুমদারের দেওয়া। কোন দূরদর্শিতায় জানি না, উনিই তো প্রথম আমার সম্ভাবনার কথা টের পেয়েছিলেন। 

মহুয়ার জীবন অবলম্বনে তৈরি হচ্ছে বায়োপিক যেখানে নামভূমিকায় অভিনয় করবেন অঙ্কিতা মল্লিক

 টলিউডের একসময়ের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী ছিলেন মহুয়া রায়চৌধুরী। তাঁর অভিনয় জীবনে দর্শকদের উপহার দিয়েছেন একের পর এক সফল ও স্মরণীয় সিনেমা। যদিও তাঁর আকস্মিক প্রয়াণ এখনও ভোলেননি বাংলা সিনেমার অনুরাগীরা। মৃত্যুর চার দশক পেরিয়ে গেলেও, আজও দর্শকমনে তিনি সমান উজ্জ্বল ও প্রাসঙ্গিক।


তাঁর অকাল মৃত্যু ঘিরে আজও তৈরি হয় অসংখ্য প্রশ্ন, যা ঘোর কাটায় না অনুরাগীদের। ঠিক কী হয়েছিল সেই রাতে? কী ছিল মহুয়া রায়চৌধুরীর অকাল মৃত্যুর নেপথ্যে?

এই রহস্য ও আবেগঘন অধ্যায় নিয়েই এবার বড় পর্দায় আসছে তাঁর জীবনীচিত্র—যা তুলে ধরবে সেই অধরা সত্যের খোঁজ।

অভিনেত্রী মহুয়া রায়চৌধুরীর ৬৭তম জন্মদিনে এক বড় ঘোষণার মাধ্যমে চমক দিলেন পরিচালক সোহিনী ভৌমিক। মহুয়ার জীবন অবলম্বনে তৈরি হচ্ছে বায়োপিক, যেখানে নামভূমিকায় অভিনয় করবেন টেলিভিশনের জনপ্রিয় মুখ ‘জগদ্ধাত্রী’ খ্যাত অঙ্কিতা মল্লিক।

এই গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত অঙ্কিতা। সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালের সঙ্গে কথায় তিনি বলেন, “রানা দা-র কাছ থেকেই অফারটা পাই। তিনি আমাকে এই চরিত্রের জন্য ভেবেছেন—এটাই আমার কাছে অনেক বড় ব্যাপার। এমন একটি চরিত্রে, তাও আবার নিজের প্রথম ছবিতে কাজ করার সুযোগ পাওয়া সত্যিই সৌভাগ্যের। মহুয়া রায়চৌধুরীর মতো একজন আইকনিক অভিনেত্রীর চরিত্রে অভিনয় করা একদিকে যেমন সম্মানের, অন্যদিকে তেমনই চ্যালেঞ্জেরও।”

তবে কবে থেকে শুটিং শুরু হবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। ধারাবাহিকের পাশাপাশি সিনেমার কাজ কীভাবে সামলাবেন, তা এখনই ভাবছেন না অঙ্কিতা। আপাতত তিনি শুধু নিশ্চিত—“ছবিটা করছি, এটুকুই জানি।”

পর্দায় মহুয়া রায়চৌধুরীর চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ—অঙ্কিতা মল্লিকের কাছে নিঃসন্দেহে এক অনন্য অভিজ্ঞতা। প্রথম ছবিতেই এতটা গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে আপ্লুত ‘জগদ্ধাত্রী’ খ্যাত অভিনেত্রী।

উল্লেখযোগ্য, জি বাংলার জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘জগদ্ধাত্রী’-তে জ্যাস সান্যাল চরিত্রে ইতিমধ্যেই দর্শকের মনে পাকাপোক্ত জায়গা করে নিয়েছেন অঙ্কিতা। ড্রয়িং রুমের চেনা মুখ এবার বড়পর্দায় ধরা দেবেন এক নতুন, গভীরতর চরিত্রে। মহুয়া রায়চৌধুরীর মতো এক আইকনিক অভিনেত্রীর ভূমিকায় তাঁকে দেখার অপেক্ষায় এখন অনুরাগীরা।

নিজের চরিত্র এবং প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত অঙ্কিতা। দর্শকদের সামনে এক ভিন্ন ছায়ায় ধরা দিতে চলেছেন তিনি। টেলিভিশনের গণ্ডি পেরিয়ে এবার বড়পর্দায় এক নতুন চমক দিতে প্রস্তুত এই তরুণ অভিনেত্রী।

শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’ মুক্তির বছরখানেক পর মহুয়া রায়চৌধুরীর দীর্ঘ সাক্ষাৎকার

 বাংলা ছবির সেই সময়কার অন্যতম জনপ্রিয় নায়িকা ছিলেন তিনি। তাঁর নামে প্রেক্ষাগৃহ হাউজ়ফুল হতো। প্রথম ছবি ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’ মুক্তির বছরখানেক পর মহুয়া রায়চৌধুরীর দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন নির্মল ধর।



নির্মল ধর: ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’ ছবিতে যখন অভিনয় করেন, তখন আপনার বয়স কত?

মহুয়া: তখন আমি ক্লাস সেভেনে পড়ি। বয়স আর কত হবে? আটান্ন সালে জন্ম। (জন্ম তারিখ জিজ্ঞাসা করায় পাশে বসা বাবা বললেন ছাপান্ন সাল। মা বললেন, না আটান্ন) আসলে বয়স বাড়িয়ে বা লুকিয়ে বলার কারণ কি জানেন? আমাকে সকলেই খুব বেশি বয়সী বলে ভেবে নেয়। আমার এখন সতেরো চলছে। কালকেই (২৬ সেপ্টেম্বর) জন্মদিন গেল।

প্রশ্ন: ফিল্মে কাজ করতে এসে পড়াশুনোর ক্ষতি হচ্ছে না?

মহুয়া: অসুবিধা তেমন কিছু হচ্ছে না। কাজের চাপে স্কুল ছেড়ে দিতে হয়েছে, এই আর কী! বাড়িতে টিউটরের কাছে নিয়মিত পড়ছি। সেভেনটি ফাইভে স্কুল ফাইনাল দেব। স্টুডিয়োয় যখন কাজ করি, কাজই করি। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। অসুবিধে কী হবে?

প্রশ্ন: ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’-এর শেষে আপনার এবং অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটা চুম্বন দৃশ্য ছিল। সেটা সাজেশনে দেখিয়েছেন পরিচালক তরুণ মজুমদার। ওই দৃশ্যে অভিনয়ের আগে তরুণবাবু আপনাকে কীভাবে নির্দেশ দিয়েছিলেন?

মহুয়া: সত্যি কথা বলতে কী তরুণবাবু আমার কাছে কিছুই লুকোননি। পায়ের ওপর পা দিয়ে দাঁড়ালে দৃশ্যটার যে কী মিনিং হবে তা আমাকে বলে দিয়েছিলেন। আমারও খুব একটা অসুবিধা হয়নি। কারণ, এটা তো ঠিক, আগেকার দিনের ওই বয়সের মেয়ের চাইতে আজকালকার মেয়েরা অনেক বেশি জানে এবং বোঝে। প্রথমটায় একটু দ্বিধা-লজ্জা নিশ্চয়ই ছিল। কিন্তু আনন্দও কম ছিল না।

প্রশ্ন: বাংলা ছবিতে তাহলে চুম্বন দৃশ্য আসুক আপনি চান?

মহুয়া: হ্যাঁ, চাইব না কেন? তবে সুন্দরভাবে আসুক, অশ্লীলভাবে নয়। ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’-এই যেমন সিম্বল দিয়ে দেখানো হয়েছে, তেমন করেই হোক। ক্ষতি কি? ফেস-টু-ফেস কিসিং দেখাতেই হবে এমন তো কথা নেই! শৈল্পিক ভঙ্গিতে দেখানো চুম্বন দৃশ্য খারাপ লাগবে না।

প্রশ্ন: তরুণ অভিনেতা-অভিনেত্রীদের ফিল্ম ইনস্টিটিউট বা ওই জাতীয় কোনও প্রতিষ্ঠান থেকে ফর্মাল ট্রেনিং থাকা কি অবশ্য দরকার?

মহুয়া: না, মোটেই না। আগেকার সব বিখ্যাত শিল্পীরা প্রায় কেউই কোনও ট্রেনিং পাননি। তাঁরা অভিনয় শিখেছেন কি করে? আসলে দরকার অভিনয়-ক্ষমতা। ওই জিনিসটা থাকলেই চলবে। না হলে সবই ফক্কা। প্রতিবছর তো পুণে ফিল্ম ইনস্টিটিউট থেকে গুচ্ছের ছেলেমেয়ে পাশ করছে। বলুন তো, তাদের মধ্যে সবাই কি দাঁড়াতে পারছে? তবে হ্যাঁ, একটা তকমা থাকলে চান্স পাওয়া যায় মাঝেমধ্যে।

প্রশ্ন: অভিনয় সম্পর্কে থিয়োরিটিকাল বা প্র্যাকটিকাল কোনও অভিজ্ঞতারই প্রয়োজন নেই, আপনি এ কথাই বলতে চান?

মহুয়া: হ্যাঁ, মোটামুটি তাই বলতে চাই। পড়াশুনো করে যেটুকু জানার সেটা না জানলে খুব একটা ক্ষতি আছে কি? বরং অভিনয়ের প্র্যাকটিস করতে পারলে কাজ হয়।

প্রশ্ন: স্কুলে নিশ্চয়ই ‘তোমার জীবনের লক্ষ্য কী’ বা ওই জাতীয় কোনও রচনা লিখেছেন। কী লিখেছিলেন তখন?

মহুয়া: ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়েছি স্কুলে। নাইনে উঠে ছেড়ে দিয়েছি। ‘তোমার জীবনের লক্ষ্য’ নামে কোনও রচনা সৌভাগ্যক্রমে আমাকে লিখতে হয়নি। তবে ছোটবেলায় ভয়ানক ইচ্ছে ছিল ডাক্তার হব। ডাক্তারদের বেশ থ্রিলিং লাইফ, তাই না?

প্রশ্ন: ডাক্তার তো হতে পারলেন না। আপশোস হচ্ছে না?

মহুয়া: হচ্ছে তো বটেই। কিন্তু এখন তো আর ডাক্তার হতে পারব না। ফিল্ম লাইনে চলে এসেছি। জেনারেল পড়াশুনাই চালাতে হচ্ছে প্রচণ্ড খেটে। তার ওপর আবার ডাক্তারি! হবে না। তবে কী জানেন, আমি অঙ্কে আর বিজ্ঞানে খুব ভালো ছিলাম। অঙ্কে আটের ঘরে আর বিজ্ঞানে ছয়ের ঘরের নীচে কোনওদিন নম্বর পাইনি। কিন্তু কী আর হবে! ভাগ্য সব পাল্টে দিচ্ছে!

প্রশ্ন: ফিল্মে অভিনয় করার ব্যাপারে বাড়ির কারওর  অমত ছিল? বা এখনও আছে কি?

মহুয়া: তেমন জোরাল কোনও অমত কারওর ছিল না। বলতে গেলে বাবার আপ্রাণ চেষ্টাতেই আজ আমি ফিল্মে চান্স পেয়েছি এবং পাচ্ছি। প্রথমটায় মায়ের একটু অমত ছিল। মৃদু আপত্তিও জানিয়েছিলেন। এখন অল কোয়ায়েট ইন দ্য হোম ফ্রন্ট বলতে পারেন।

প্রশ্ন: অভিনয়ের প্রতি আপনার আকর্ষণ এল কীভাবে বা কার কাছ থেকে?

মহুয়া: ছোটবেলায় পাড়ায় বিভিন্ন ফাংশনে নাচতাম। স্কুলেও নাটক করেছি দু’-একটা। বাবা আমার এই নাচের ব্যাপারটাকে বেশ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। আমাকে ফিল্মে নামাবার জন্য তিনিই বহুদিন ধরে বহু লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করছিলেন। তাঁর চেষ্টা আজ সফল হতে চলেছে, এটাই আমার আনন্দের বিষয়।

প্রশ্ন: যদিও বেশিদিন কাজ করছেন না, তবুও এই অল্প ক’দিনে ফিল্ম লাইন সম্পর্কে আপনার কী ধারণা হয়েছে যদি অল্পকথায় বলেন?

মহুয়া: ফিল্ম লাইন সম্পর্কে বাইরের লোক হিসেবে খুব একটা পরিষ্কার ধারণা আমার ছিল না। এখনও যে ধারণাটা খুব স্পষ্ট, তা বলতে পারছি না। তবে এ লাইনে ভালো লোক যেমন আছেন, খারাপ লোকেরও অভাব নেই। খুব সাবধানে চলতে হচ্ছে। অনেকেই কথা দিয়ে কথা রাখেন না। এটাই খারাপ লাগে। এই তো কিছুদিন আগে একজন পরিচালক তাঁর ছবির জন্য আমাকে ঠিক করলেন। ক’দিন রিহার্সালও দিলাম। তারপর হঠাৎ কাগজে দেখলাম শিল্পী তালিকায় আমার নাম নেই। তা নিয়ে আমি কোনওদিন অভিযোগ করিনি কারওর কাছে। সেই পরিচালককেও কিছু বলিনি। আমার রিঅ্যাকশন তাঁকে বুঝতেই দিইনি। যা আছে আমার মনের মধ্যেই আছে। বরং একদিন রাস্তায় সেই পরিচালককে হন্যে হয়ে ট্যাক্সি খুঁজতে দেখে আমার গাড়িতে লিফট দিয়েছি। উনি সেদিন গাড়িতে বসে আমাকে বলেছিলেন, ‘মহুয়া, তোমাকে নিলেই বোধহয় ভালো হত। ছবিটা রিলিজ় করে যেত এতদিনে।’ এই ধরনের কথা দিয়ে কথা না রাখা ব্যাপারটা বড় খারাপ লাগে।

প্রশ্ন: ফিল্মের কোনও হিরো আপনাকে প্রেম নিবেদন করেছে এখনও পর্যন্ত?

মহুয়া: হ্যাঁ, সেরকম প্রস্তাব পেয়েছি। কিন্তু নামটা আমি বলতে পারব না। কাইন্ডলি অনুরোধ করবেন না।

প্রশ্ন: আপনার রিঅ্যাকশন কীরকম?

মহুয়া: ফিল্ম হিরোদের প্রেম সম্পর্কে আমার বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা নেই। এদের বেশিরভাগেরই চোখে একটা রঙিন চশমা আঁটা থাকে। আজ এই হিরোইনকে ভালো লাগে, কাল আমাকে, পরশু অন্য কাউকে। আসলে এদের চাহিদাটা একটা জায়গাতেই সীমাবদ্ধ। ফিল্ম হিরোর সঙ্গে প্রেম আমি ভাবতেই পারি না।

প্রশ্ন: তাহলে আপনার প্রেমের লাইফ ফিল্ম লাইনের বাইরেই থাকছে?

মহুয়া: হ্যাঁ, তাই।

প্রশ্ন: ফিল্ম লাইনের বাইরে কেউ আপনাকে প্রেম নিবেদন করেছে কি?

মহুয়া: আপাতত তেমন কেউ নেই। থাকলেও বুঝতে পারছেন ব্যাপারটা একান্তই ব্যক্তিগত এবং গোপনীয়। এর চাইতে বেশি আর কিছু বলতে পারব না।

প্রশ্ন: বাড়িতে আপনার বাবা-মা কি আপনাকে ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছেন?

মহুয়া: এ প্রসঙ্গে একটা কথা বলি। আমার বাবা-মা কেউই তেমন অতিআধুনিক মাইন্ডেড নন। কিছু সংস্কার তাঁদের মধ্যে আছেই। তবুও আমার জীবনের কোনও ডিসিশন নেওয়ার আমার যেমন অধিকার আছে, বাবা-মায়ের মতকেও একেবারে উড়িয়ে দিতে পারব না। কিছু করার আগে একটু ভাবব। তবে কী না সবকিছুই সময়ের ওপর নির্ভর করে।

প্রশ্ন: উত্তমকুমার সম্পর্কে আপনার নিশ্চয়ই একটু বেশিই ঔৎসুক্য ছিল। এখন তো তাঁর সঙ্গে অভিনয় করছেন। ভাবতে কেমন লাগছে?

মহুয়া: সত্যি কথা বলতে কী, উত্তমকুমার বলতে মেয়েরা যেমন পাগল হয়ে যায়, আমি তেমন কোনওদিনই ছিলাম না। আমাদের পাড়ায় বহু ছবির শুটিং হয়েছে। পাড়ার সবাই ঝেঁটিয়ে গিয়েছে উত্তমকুমারকে দেখতে। মেয়েদের মধ্যে সে কী উত্তেজনা! আমি কিন্তু তেমন উৎসাহ পেতাম না। এখন তাঁর সঙ্গে অভিনয় করছি। ভাবলে আনন্দ লাগে অবশ্যই। ওঁর সঙ্গে কাজ করে আমি শিখছিও অনেক কিছু।


প্রশ্ন: কথায়-কথায় আসল ব্যাপারটা জানা হল না। ফিল্ম লাইনে আগে থেকে তো আপনার জানাশোনা কেউ ছিল না। তাহলে সুযোগ পেলেন কীভাবে?

মহুয়া: কোথা থেকে শুরু করব তাই ভাবছি। ঘটনা তো অনেক। ‘নয়া মিছিল’ ছবির একটা চরিত্রের জন্য মেক-আপ টেস্ট দিতে গিয়েছিলাম। পরিচালক পীযূষ গঙ্গোপাধ্যায়ের পছন্দ হল না। তখন মেক-আপম্যান জামাল সাহেব আমাকে তরুণবাবুর কাছে পাঠালেন। গেলাম। উনি দেখে-টেকে বললেন, ‘খবর দেব।’ এর আগেই অবশ্য গায়িকা বনশ্রী সেনগুপ্ত আমার একখানা ছবি তরুণবাবুকে দিয়েছিলেন। খবর পেলাম তরুণবাবু আমাকেই সিলেক্ট করেছেন। অবশ্য এতসব যোগাযোগের পিছনে বাবার আপ্রাণ পরিশ্রমটাই কাজ করেছে বেশি।

প্রশ্ন: আপনার সমসাময়িক নতুন নায়িকাদের সঙ্গে আপনি কোনও প্রতিযোগিতার ভাব বুঝতে পারছেন কি?

মহুয়া: না, তেমন কিছু আমি ফিল করিনি এখনও। আমার বয়স তো খুবই অল্প আর যাঁরা আছেন তাঁদের সঙ্গে এখনও আমার কম্পিটিশনের ব্যাপারটা আসেনি। যে ধরনের চরিত্র আমি করছি, সেখানে আমার বয়সি শিল্পীই বা কোথায়? অনেকেই আমার চাইতে বয়সে ও অভিজ্ঞতায় বড়।

প্রশ্ন: আপনার সাফল্য-ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আপনার ধারণা কী?

মহুয়া: ছবিতে কাজ করছি, সবাই ভালো বলছেন। এটাই ভালো লাগছে। তবে আমি নিজে সন্তুষ্ট নই। বেশি আর কী বলতে পারি!

মহুয়া রায়চৌধুরীর কথা বললেন অভিনেত্রী দেবিকা মুখোপাধ্যায়

বলেছেন দেবিকা মুখোপাধ্যায়

 'আবির' ছবির অফার নিয়ে কিন্তু পরিচালক কাজল মজুমদার মহুয়া মারা যাবার  আমার কাছে এসেছিলেন। মহুয়ার সঙ্গে আমি এই ছবিতে কোনও শুটিং করিনি। কারণ ছবিটা যখন শুরু হয় আমি কোনও গল্পেই ছিলাম না। মহুয়া ছবিটা শেষ করে যেতে পারেনি। তখন ছবিটা শেষ করতে পরিচালক গল্পে আর একটি নায়িকা চরিত্র আমাকে নিয়ে এলেন। 'আবির' ছবিতে দেখা যায় আমার আর মহুয়ার একসঙ্গে দৃশ্য, বেশ কয়েকটা। কিন্তু ওগুলো সব সুচতুর এডিটিং। মহুয়া মারা যাবার পর তো ডিরেক্টর আমায় এই ছবির অফার দেন। আমি এই ছবিতে মহুয়ার সঙ্গে শুটিং করিনি। সেটা দর্শকরা ধরতে পারবেন না। 'আবির' ছবিটা ভালই চলেছিল। অল্প টাকার ছবি, আমরাও তো বেশি টাকা পাইনি সেসময়। কিন্তু চলেছিল। এই ছবিতে মাদ্রাজের একটা বিখ্যাত ট্রেনড কুকুর 'মোতি' ছিল। সে হিন্দি সিনেমাও অনেক করেছিল। যাকে দেখেতেও 'আবির' ছবিটা জনপ্রিয় হয়েছিল।

Mahua Roy Choudhury : আত্মহত্যা নাকি খুন, মহুয়া রায় চৌধুরীর মৃত্যুর রাতে  ঠিক কী হয়েছিল?

মহুয়ার সঙ্গে আর কোনও ছবিতে আপনি কাজ করেছিলেন?

হ্যাঁ তপন সিনহার 'রাজা'। একই ছবিতে আমরা দু'জন ছিলাম। তপন সিনহার সঙ্গে কাজ করা আমার কাছে একটা স্মরণীয় অভিজ্ঞতা। তার আগে 'বাঞ্ছারামের বাগান', 'আদালত ও একটি মেয়ে' করেছি। তবে তপনদার আর একটা ছবিতে আমি হিরোইন ছিলাম। যে রোলটা হিন্দিতে মহুয়া করেছিল। 'আদমি অউর অউরাত' ছবিতে অমল পালেকর আর মহুয়া রায়চৌধুরী ছিল। এই হিন্দি ছবিটার গল্প নিয়ে একটা বাংলা ছবিও হয়েছিল 'মানুষ'। মহুয়ার রোলটা আমি করি আর আমার বিপরীতে ছিলেন শমিত ভঞ্জ। মহুয়া মারা যাবার পর এই বাংলা 'মানুষ' ছবির আমার কাছে আসে। এই ছবিটা মুক্তিও পেয়েছিল পরে। কিন্তু এখন আর কোনও চর্চায় নেই। আমাকে শুধুই 'ছোট বৌ' বলা হয় চিরকাল। অথচ তপন সিনহার এতগুলো ছবি করেছি। 'মানুষ' ছবিতে হিরোইন আমি, তবু কজন আর জানল? ছবিটাই তো পাওয়া যায় না।

Accident or murder? Actress Mahua Roychowdhury's death a mystery

মহুয়ার সঙ্গে আপনার কাজের অভিজ্ঞতা?

মহুয়া আমার থেকে একটু সিনিয়র ছিল। তবে আমার দু'জন দু'জনকে তুই করেই বলতাম। ওঁর চলে যাওয়া বড় মাপের নায়িকার প্রস্থান। ভীষণ ইমোশনাল অ্যাকট্রেস ছিল মহুয়া। গ্লিসারিন ছাড়া কাঁদতে পারত। যেটা এখন কেউ জানেই না, পারেই না। সব চোখে ড্রপ দিয়ে দিয়ে কাঁদে। নিজের বাস্তব জীবনের কষ্টটা মহুয়ার মনে পড়ত। তাই বলত 'কান্নার সিনে আমার গ্লিসারিন লাগে না'। একটা মেয়ে যখন ক্যামেরার সামনে হাউহাউ করে কাঁদতে পারে তখন তো তাঁর ভেতরের যন্ত্রনাগুলো বেরিয়ে আসে। আমিও পারতাম সেটা।আমি মহুয়াকে বলতাম 'আমার ছোটবেলায় বাবা মারা গেছে, বাবার কথা ভেবে আমি কেঁদে ফেলি'। মহুয়াও তখন বলত 'আমার জীবনেও অনেক কষ্ট আছে। সেগুলোর কথা ভেবে আমি কেঁদে ফেলি'।

মহুয়া রায়চৌধুরীর স্মৃতিচারণ মৌমিতা রায় চৌধুরীর

 


গীতা দত্ত যেমন শুধুমাত্র বড় শিল্পী, নিখুঁত গায়িকা ছিলেন না,ছিলেন একটি সোনার হৃদয়ের অধিকারিণী। নিজের হাত থেকে সোনার বালাটিও খুলে দিতে পারতেন কাছের কেউ যদি একবার বলতেন খুব সুন্দর তোমার বালাটি, আলমারির শাড়ি নির্দ্বিধায় বিলিয়ে দিতে পারতেন,কারোর যদি তাঁর শাড়িটা একবার জানতে পারতেন পছন্দ হয়েছে। আবার ছোট ছোট পথ শিশুদের নিজের ব্যাগ খুলে মুঠোমুঠো টাকা দিয়ে দিতেন তাদের কষ্ট সহ্য করতে না পেরে।গাড়ি নিয়ে গ্রামে চলে যেতেন কখনও বা,ছোট নোটবুকে টুকে নিতেন,জেনে নিতেন ওখানকার মানুষদের বিশেষ করে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের কী কী প্রয়োজন। পরদিন সেই মতন গাড়ি বোঝাই করে সব কিনে নিয়ে গিয়ে দিতেন তাদেরকে।এত বড় মন চট করে সকলের দেখা যায় না। ঠিক তেমনই ছিলেন মহুয়া রায় চৌধুরী।দুহাতে টাকা পয়সা রোজগার করেছেন।কারোর সমস্যা জানলে,দেখলে তাঁর মায়ার শরীর সেটা সহ্য করতে পারত না, সবসময়ই সাহায্যের হাতটি বাড়িয়ে দিতেন বলা ভালো উপুড় করে দিতেন।এক পরিচিত অভিনেত্রীর কাছ থেকে আমি জেনেছি, বিশ্বজিৎ ছেড়ে চলে যাবার পর যে কোনও কারণেই হোক ওঁর প্রথম স্ত্রী রত্না চ্যাটার্জি শাড়ি বিক্রি করতেন।তাঁর আর্থিক সমস্যা ছিল। ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই হয়তো কখনো সখনো একটা,দুটো শাড়িও কিনে তাঁকে সাহায্য করতেন কিন্তু মহুয়া রত্নাদেবীর কাছ হতে প্রায়শই সবকটা শাড়িই কিনে নিতেন।এখানেই পার্থক্য তাঁর আর সকলের চেয়ে।মনটা ছিল তাঁর ভারী কুসুম কোমল,দরদী।সোনা দিয়ে বাঁধানো নয়তো কি?

আর মোটেও তিনি ব্যক্তিগত জীবনে সুখে,শান্তিতে থাকতে পারতেন না। খুব ছোট থেকেই তাঁকে টাকা রোজগারের মেশিন বানানো হয়েছিল।কালক্রমে তিনি বড় নায়িকাও হলেন বাংলা ছবির। অসামান্য অভিনেত্রী হিসেবে একাধিকবার নিজেকে প্রমাণ করলেন, দর্শকদের নয়নের মণি হয়ে উঠলেন।বিয়েও করলেন নিজের মতেই।পুত্র সন্তানের জননী হলেন।এমন ভর ভরন্ত সময়ে হঠাৎ অগ্নিদগ্ধ হয়ে মরেই গেলেন!হাজার তর্ক বিতর্ক,কোহরায় ঘেরা সত্য-অসত্যের ঘেরাটোপে নানান আলোচনা, সমালোচনা,তাঁর চরিত্রটি নিয়ে কাঁটাছেঁড়া সব হলো। কিন্তু সবথেকে যা আমার একান্ত ব্যক্তিগত একটি ঘৃণাবোধের জায়গা এসব দেখেশুনে তৈরি হয়েছে তা হলো মহুয়াদেবীর আপনজন সাজা এক বন্ধুর সাক্ষাৎকার পড়ে এবং শুনে।যখন বিপরীতের মানুষটি বেঁচেই নেই তখন দেখেছি কিছু মানুষ আপনজন,বন্ধু,সবটা জানি ইত্যাদি দাবী করে বেশ মুখোরোচক,রসালো তথ্য সরবরাহের কাজটি করতে আসরে নামেন।এরা হয়তো এক সময় ঘনিষ্ঠ ছিলেন ।মানছি,দুঃখ ভরা জীবনে এদের অবলম্বন করে, বিশ্বাস করে মনের কথাও হয়তো বলেছিলেন দুঃখী মানুষটি ।তার পুরস্কার এরা ভালো মতন দিয়েছেন, আরও বেশি করে হয়তো রঙচঙ চড়িয়ে,বাজারে ভালো কাটতি হবে এই ভেবে।এমন বন্ধু বা আপনজনের বেশে আসলেই হিংসুটে কিছু মানুষ থাকেন,আমাদের চারপাশেও থাকে আর মহুয়া বা মহানায়কের মতন মানুষের তো কথাই নেই উচ্চতার শিখরে তাঁদের বাস,এইসব মানুষের কাজটাই হলো সুযোগ বুঝে হিংসার বিষ উগরে দেওয়া এভাবেই -সত্য বলার ছলে!বিপরীতের বিখ্যাত মানুষগুলো বেঁচে থাকলে যে কাজ করতে তাদের হয়তো হিম্মৎটাই হতো না কস্মিনকালেও।মিস শেফালি বলুন বা কল্যাণী মণ্ডল বা রত্না ঘোষাল কখনও এঁদের মধ্যে একজন মহানায়কের সম্বন্ধে তাঁর জীবদ্দশায় আর বলতে সাহস করেননি বা বেঁচে থাকতে বলতে হিম্মৎ হতো না এমন অনেক বানানো আষাঢ়ে গালগল্প বা অর্ধসত্য।সুচিত্রা সেনকে নিয়ে যদিওবা বললেও মহানায়িকা বেঁচে থাকতেই বহুদিন এসব নিয়ে নিস্পৃহ ছিলেন এবং অন্তরালে ছিলেন বলে, তাঁর শ্বেতী হয়েছে তাই নাকি তিনি আড়ালে চলে গিয়েছিলেন এই ধরণের কুরুচিপূর্ণ মিথ্যাচার করতে সাহস দেখিয়েছিলেন এক অভিনেত্রী আর রত্না ঘোষাল তো এই কদিন আগেও জঘন্যতম সব কথা বলেছেন মহুয়া রায় চৌধুরীর বিষয়ে 'মহুয়া পুত্রকেও নাকি মদ্যপান করাতেন মহুয়া ইত্যাদি ইত্যাদি!' আর বলছেন কখন এঁরা?যখন বিপরীতের মানুষটি জীবিতই নেই এসব সত্যবাদীদের সত্যি না মিথ্যে তা নিয়ে নিজে কিছু বলবেন সে বিষয়ে।

কিছু হীনমন্যতায় ভোগা,হিংসুটে অযোগ্য মানুষের কাজটাই হলো নিজে যে জায়গায় পৌঁছাতে পারেনি সেই জায়গায় পৌঁছাতে কাউকে দেখলেই তাঁর অনুপস্থিতিতে এমন মিথ্যাচার করা,কুৎসা রটানো।এসব করে কী লাভ হয়? মানুষ তো আর বোকা নয়। গুণীজন ঠিকই তাঁর জায়গায়, মানুষের মনে অটল অনড়ভাবেই থেকে যায় আর কুৎসাকারীদের সকলেই মিথ্যেবাদী হিসেবে চিহ্নিত করে রাখে এবং মনে মনে ঘৃণাই করে থাকে।সকলের এটা মাথায় রাখা উচিত।

মহুয়া রায়চৌধুরীর স্মৃতিচারণ প্রখ্যাত চলচ্চিত্র সাংবাদিক রবি বসুর কন্যা মনোয়ী দাঁর


 মনে পড়ছে মহুয়া রায়চৌধুরীর সাথে ব্যক্তিগতভাবে আমার প্রথম পরিচয় হওয়ার দিনটা। তখন আমার বয়স বড়জোর ৬ কি ৭ , কিন্তু সবকিছু এখনো ছবির মত স্পষ্ট আমার কাছে। সে দিন আমরা ছিলাম নব্যেন্দু কাকুর (পরিচালক নব্যেন্দু চট্টোপাধ্যায়) বাড়িতে। সকাল থেকেই সবাই ব্যস্ত, বোলপুরে 'আজ কাল পরশুর গল্প' ছবির শুটিং শুরু হবে। সকাল থেকে সাজো সাজো রব নব্যেন্দু কাকুর বাড়িতে বোলপুর যাত্রার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার জন্য। বাপি আর দাদা তো ছিলই , এমনকি আমার মা আর মাসিও সেবার বোলপুর যাচ্ছিলেন, যেহেতু আমার মাসতুতো ভাই টুবলুকে মহুয়ার ছেলের চরিত্রে কাস্ট করা হয়েছিল। তো যাই হোক , নব্যেন্দু কাকুর বাড়িতে তো আমাদের অবাধ যাতায়াত ছিল, কাকিমা (নব্যেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী) আমাদের দুই বোনকে খুব ভালবাসতেন, কাকিমা আমায় জিজ্ঞেস করলেন , "তোর মৌয়ের (মহুয়া) সাথে আলাপ হয়েছে?" আমি বললাম "না আমার সাথে আলাপ নেই"। আমার মামার বাড়ি হেদুয়ার অলক চক্রবর্তীর (পরিচালক/তিলকের দাদা) বাড়ির একটা বাড়ি পরে , মহুয়া রায় চৌধুরী বিয়ের পর বছর দুয়েক সেখানে ছিলেন। তাই আমার মায়ের সাথে অল্পবিস্তর পরিচয় ছিল, আর বাবার আর দাদার সাথে তো কাজের সূত্রে ওনার হৃদ্যতা, কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে তখনও আমার সাথে পরিচয় ছিল না। কাকিমা বললেন "আজ মৌ আসবে , তোর সাথে পরিচয় করিয়ে দেব"। তখন অবধি হল-এ গিয়ে আমি মহুয়া রায়চৌধুরীর একটা সিনেমাই দেখেছি 'শ্রীমান পৃথ্বীরাজ' । তখন এত ছোট ছিলাম আমি সিনেমার কিছুই বুঝতাম না। বাড়ির সবাই গিয়েছিল তাই আমাকেও নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, কিন্তু তখন থেকেই টিকলি পড়া মিষ্টি বউ সাজা মেয়েটার মুখটা আমার মনে গেঁথে গিয়েছিল, সবাইকে বলতাম "ওই টিকলি পড়া মেয়েটাকে আমার খুব ভালো লাগে"। ওনার নামটাও জানতাম না, কিন্তু পরবর্তীকালে টেলিভিশনের দৌলতে ওনার অনেক ছবি আমি তখন দেখে ফেলেছি : যেমন অজস্র ধন্যবাদ, আনন্দমেলা, শেষ রক্ষা ইত্যাদি, এবং যথারীতি আমার ভীষণ প্রিয় অভিনেত্রী হয়ে উঠেছেন উনি। তো সেদিন নব্যেন্দু কাকুর বাড়িতে কাকীমা যখন বললেন আজ তোর সাথে মৌয়ের আলাপ করিয়ে দেব তখন আমিও খুব উত্তেজিত হয়েছিলাম প্রিয় নায়িকাকে কাছ থেকে দেখার জন্য। একে একে সব অভিনেতারা আসতে শুরু করেছেন, যথা সময়ে মহুয়া রায় চৌধুরীর গাড়ি এলো এবং ছোট্ট গোলাকে নিয়ে উনি নেমে এলেন গাড়ি থেকে। সেদিন উনি শার্ট প্যান্ট পড়েছিলেন যাতায়াতের সুবিধার জন্য, আর ছোট্ট গোলাকে লাল টুকটুকে গেঞ্জি প্যান্ট পড়ে রাজপুত্রের মত লাগছিল। ওতো এসেই ওর সঙ্গী টুবলুর (আমার ভাই) সাথে খেলতে আরম্ভ করে দিল, মহুয়ার সেদিন মুড অফ ছিল কারণ ওনার স্বামীর ভীষণ জ্বর , তাই আসতে পারেননি। যাই হোক , কাকিমা এত ব্যস্ততার মধ্যেও আমাদের দুই বোনের হাত ধরে মৌ -এর কাছে নিয়ে গিয়ে বললেন "মৌ , তোমার অনেক বড় দুজন ফ্যান তোমার সাথে আলাপ করবে বলে বসে আছে, রবিদার দুই মেয়ে"। উনি সেই কথা শুনে আমাদের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হেসে জোড়হাত করে এমন ভাবে আমাদের নমস্কার জানালেন যেন মন্দিরে দেবতা দর্শন করছেন, আমি ব্যাপারটায় খুব বিস্মিত হয়ে গেছিলাম। এত ছোট বাচ্চাদের সাথে পরিচয় হলে লোকে বড়জোর গাল টিপে আদর করে , এভাবে ভক্তি ভরে নমস্কার জানাতে তো কখনো দেখিনি! পরবর্তীকালে আমি উপলব্ধি করি যে নিজের প্রফেশন সম্বন্ধে একজন মানুষের কতখানি শ্রদ্ধা ভালবাসা থাকলে মানুষ শুধুমাত্র ওনার 'ফ্যান' কথাটা শুনে তাদের ভগবান দর্শন করার মতো করে প্রণাম জানায় , সেই জন্যই তো তিনি আজও মানুষের কাছে অমর হয়ে আছেন, ভীষণ ভালোবাসার একজন অভিনেত্রী হয়ে ছিলেন, আছেন, থাকবেন।


মহুয়া রায়চৌধুরীর জীবনে আমার মত একজন সাধারন ফ্যানের সামান্যতম অবদান আছে এটা ভাবলে আমি নিজে নিজেই গর্ববোধ করি। এই ঘটনাটা আরও আগের, সেদিন নব্যেন্দু কাকু আমাদের বাড়িতে বসে বাবার সাথে 'আজ কাল পরশুর গল্প' ছবির কাস্টিং নিয়ে আলোচনা করছেন, আমি কাকুর খুব ন্যাওটা ছিলাম , কাকুও আমায় খুব স্নেহ করতেন, গেলেই আমায় কাছে টেনে নিয়ে আদর করতেন , আমার সব আবদার মেটাতেন ; বিনিময়ে আমায় কাকুর মাথার পাকা চুল বেছে দিতে হতো, যদিও পাকা চুল সেরকম ছিল না। যাইহোক , সেই রকমই একটা দিনে আমি পাকা চুল বাছছি আর বাপি আর কাকুর কাস্টিং নিয়ে আলোচনা শুনছি। ওরা একটা গ্রামের বউয়ের চরিত্রে কাকে নেওয়া যায় আলোচনা করছেন, সন্ধ্যা রায়ের কথা উঠতে কাকু বললেন , আমি এই ছবিতে ঠিক 'ফুলেশ্বরী' ছবির ইমেজটা চাইছি না, 'বালিকা বধূ' ছবির মৌসুমী চ্যাটার্জির কথা উঠলো। সেখানে একটা সমস্যা উনি তখন বম্বেতে ভীষণ ব্যস্ত এবং গ্ল্যামারাস নায়িকা হয়ে উঠেছেন, ওনাকে ডি গ্ল্যামারাইজ করলেও এই ছবির ইমেজ নষ্ট হবে, যেহেতু এটা আর্ট ফিল্ম । এই ধরনের আলোচনা ওদের মধ্যে চলছে, আমার মনে তো একজনেরই মুখ ভেসে উঠছে সে হল মহুয়া রায়চৌধুরী । কিন্তু বলতে সাহস পাচ্ছিনা, কারণ বাবা পছন্দ করতেন না বড়দের মধ্যে কথা বলা। যাই হোক , অবশেষে থাকতে না পেরে কাকুর কাছে বলেই বসলাম "কাকু , মহুয়া রায়চৌধুরীকে নাও না গো"।কাকু কথাটা শুনলেন এবং বাপিকে জিজ্ঞেস করলেন "রবিদা মহুয়াকে নিলে কেমন হবে?" বাপি বললো "ভালো হবে! খুব ভালো হবে!"- বাকিটা তো ইতিহাস। এই ছবিতে মহুয়া রায়চৌধুরী অভিনয় করে সেবছর শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছিলেন, এবং ওনাকে অভিনেত্রী হিসেবে অন্য লেভেলে পৌঁছে দিয়েছিল এই ছবি। পরবর্তীকালে কোনো এক সাক্ষাৎকারে ওনাকে আমি বলতে শুনেছি যে "আজকাল পরশুর গল্পের মত চরিত্র আর পেলাম কোথায়!" যাইহোক আমার দুঃখ একটাই রয়ে গেল ।সেই দিনের ওনার সেই ছোট্ট ফ্যানটি এই ছবিতে অভিনয় করার জন্য ওনার নাম সাজেস্ট করেছিল সেটা উনি কোনো দিন জানতে পারলেন না।

মহুয়া রায়চৌধুরীর কথা বললেন অভিনেত্রী দেবিকা মুখোপাধ্যায়

 মহুয়ার ডাগর-ডোগর মুখটা ক্লোজ আপে কী মিষ্টি লাগত! মহুয়ার রূপে কোনও উগ্রতা ছিল না। গায়ের রং কিন্তু শ্যামলা।  মহুয়ার খুব সাধারণ মধ্যবিত্ত ...