মহুয়া রায়চৌধুরীর স্মৃতিচারণ মৌমিতা রায় চৌধুরীর

 


গীতা দত্ত যেমন শুধুমাত্র বড় শিল্পী, নিখুঁত গায়িকা ছিলেন না,ছিলেন একটি সোনার হৃদয়ের অধিকারিণী। নিজের হাত থেকে সোনার বালাটিও খুলে দিতে পারতেন কাছের কেউ যদি একবার বলতেন খুব সুন্দর তোমার বালাটি, আলমারির শাড়ি নির্দ্বিধায় বিলিয়ে দিতে পারতেন,কারোর যদি তাঁর শাড়িটা একবার জানতে পারতেন পছন্দ হয়েছে। আবার ছোট ছোট পথ শিশুদের নিজের ব্যাগ খুলে মুঠোমুঠো টাকা দিয়ে দিতেন তাদের কষ্ট সহ্য করতে না পেরে।গাড়ি নিয়ে গ্রামে চলে যেতেন কখনও বা,ছোট নোটবুকে টুকে নিতেন,জেনে নিতেন ওখানকার মানুষদের বিশেষ করে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের কী কী প্রয়োজন। পরদিন সেই মতন গাড়ি বোঝাই করে সব কিনে নিয়ে গিয়ে দিতেন তাদেরকে।এত বড় মন চট করে সকলের দেখা যায় না। ঠিক তেমনই ছিলেন মহুয়া রায় চৌধুরী।দুহাতে টাকা পয়সা রোজগার করেছেন।কারোর সমস্যা জানলে,দেখলে তাঁর মায়ার শরীর সেটা সহ্য করতে পারত না, সবসময়ই সাহায্যের হাতটি বাড়িয়ে দিতেন বলা ভালো উপুড় করে দিতেন।এক পরিচিত অভিনেত্রীর কাছ থেকে আমি জেনেছি, বিশ্বজিৎ ছেড়ে চলে যাবার পর যে কোনও কারণেই হোক ওঁর প্রথম স্ত্রী রত্না চ্যাটার্জি শাড়ি বিক্রি করতেন।তাঁর আর্থিক সমস্যা ছিল। ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই হয়তো কখনো সখনো একটা,দুটো শাড়িও কিনে তাঁকে সাহায্য করতেন কিন্তু মহুয়া রত্নাদেবীর কাছ হতে প্রায়শই সবকটা শাড়িই কিনে নিতেন।এখানেই পার্থক্য তাঁর আর সকলের চেয়ে।মনটা ছিল তাঁর ভারী কুসুম কোমল,দরদী।সোনা দিয়ে বাঁধানো নয়তো কি?

আর মোটেও তিনি ব্যক্তিগত জীবনে সুখে,শান্তিতে থাকতে পারতেন না। খুব ছোট থেকেই তাঁকে টাকা রোজগারের মেশিন বানানো হয়েছিল।কালক্রমে তিনি বড় নায়িকাও হলেন বাংলা ছবির। অসামান্য অভিনেত্রী হিসেবে একাধিকবার নিজেকে প্রমাণ করলেন, দর্শকদের নয়নের মণি হয়ে উঠলেন।বিয়েও করলেন নিজের মতেই।পুত্র সন্তানের জননী হলেন।এমন ভর ভরন্ত সময়ে হঠাৎ অগ্নিদগ্ধ হয়ে মরেই গেলেন!হাজার তর্ক বিতর্ক,কোহরায় ঘেরা সত্য-অসত্যের ঘেরাটোপে নানান আলোচনা, সমালোচনা,তাঁর চরিত্রটি নিয়ে কাঁটাছেঁড়া সব হলো। কিন্তু সবথেকে যা আমার একান্ত ব্যক্তিগত একটি ঘৃণাবোধের জায়গা এসব দেখেশুনে তৈরি হয়েছে তা হলো মহুয়াদেবীর আপনজন সাজা এক বন্ধুর সাক্ষাৎকার পড়ে এবং শুনে।যখন বিপরীতের মানুষটি বেঁচেই নেই তখন দেখেছি কিছু মানুষ আপনজন,বন্ধু,সবটা জানি ইত্যাদি দাবী করে বেশ মুখোরোচক,রসালো তথ্য সরবরাহের কাজটি করতে আসরে নামেন।এরা হয়তো এক সময় ঘনিষ্ঠ ছিলেন ।মানছি,দুঃখ ভরা জীবনে এদের অবলম্বন করে, বিশ্বাস করে মনের কথাও হয়তো বলেছিলেন দুঃখী মানুষটি ।তার পুরস্কার এরা ভালো মতন দিয়েছেন, আরও বেশি করে হয়তো রঙচঙ চড়িয়ে,বাজারে ভালো কাটতি হবে এই ভেবে।এমন বন্ধু বা আপনজনের বেশে আসলেই হিংসুটে কিছু মানুষ থাকেন,আমাদের চারপাশেও থাকে আর মহুয়া বা মহানায়কের মতন মানুষের তো কথাই নেই উচ্চতার শিখরে তাঁদের বাস,এইসব মানুষের কাজটাই হলো সুযোগ বুঝে হিংসার বিষ উগরে দেওয়া এভাবেই -সত্য বলার ছলে!বিপরীতের বিখ্যাত মানুষগুলো বেঁচে থাকলে যে কাজ করতে তাদের হয়তো হিম্মৎটাই হতো না কস্মিনকালেও।মিস শেফালি বলুন বা কল্যাণী মণ্ডল বা রত্না ঘোষাল কখনও এঁদের মধ্যে একজন মহানায়কের সম্বন্ধে তাঁর জীবদ্দশায় আর বলতে সাহস করেননি বা বেঁচে থাকতে বলতে হিম্মৎ হতো না এমন অনেক বানানো আষাঢ়ে গালগল্প বা অর্ধসত্য।সুচিত্রা সেনকে নিয়ে যদিওবা বললেও মহানায়িকা বেঁচে থাকতেই বহুদিন এসব নিয়ে নিস্পৃহ ছিলেন এবং অন্তরালে ছিলেন বলে, তাঁর শ্বেতী হয়েছে তাই নাকি তিনি আড়ালে চলে গিয়েছিলেন এই ধরণের কুরুচিপূর্ণ মিথ্যাচার করতে সাহস দেখিয়েছিলেন এক অভিনেত্রী আর রত্না ঘোষাল তো এই কদিন আগেও জঘন্যতম সব কথা বলেছেন মহুয়া রায় চৌধুরীর বিষয়ে 'মহুয়া পুত্রকেও নাকি মদ্যপান করাতেন মহুয়া ইত্যাদি ইত্যাদি!' আর বলছেন কখন এঁরা?যখন বিপরীতের মানুষটি জীবিতই নেই এসব সত্যবাদীদের সত্যি না মিথ্যে তা নিয়ে নিজে কিছু বলবেন সে বিষয়ে।

কিছু হীনমন্যতায় ভোগা,হিংসুটে অযোগ্য মানুষের কাজটাই হলো নিজে যে জায়গায় পৌঁছাতে পারেনি সেই জায়গায় পৌঁছাতে কাউকে দেখলেই তাঁর অনুপস্থিতিতে এমন মিথ্যাচার করা,কুৎসা রটানো।এসব করে কী লাভ হয়? মানুষ তো আর বোকা নয়। গুণীজন ঠিকই তাঁর জায়গায়, মানুষের মনে অটল অনড়ভাবেই থেকে যায় আর কুৎসাকারীদের সকলেই মিথ্যেবাদী হিসেবে চিহ্নিত করে রাখে এবং মনে মনে ঘৃণাই করে থাকে।সকলের এটা মাথায় রাখা উচিত।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’ মুক্তির বছরখানেক পর মহুয়া রায়চৌধুরীর দীর্ঘ সাক্ষাৎকার

 বাংলা ছবির সেই সময়কার অন্যতম জনপ্রিয় নায়িকা ছিলেন তিনি। তাঁর নামে প্রেক্ষাগৃহ হাউজ়ফুল হতো। প্রথম ছবি ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’ মুক্তির বছরখানেক ...