কমল বন্দোপাধ্যায়ের ফেসবুক পেজ থেকে:-
গতকাল ঠিক যেখানে শেষ করেছিলাম , ঠিক সেখান থেকেই শুরু করি । যে সময়ের কথা বলছি অর্থাৎ সত্তর দশক , তখন মোবাইল ফোন কি বস্তু কেউ জানতো না। ল্যান্ডলাইন ফোন তখন যাঁর বাড়িতে থাকতো , তিনি তখন অভিজাত বলেই গণ্য হতেন । হ্যা, মহুয়ার কোয়ার্টারেও অবশ্যই ঐ ল্যান্ডলাইন ফোন ছিল যেহেতু ওর মা নিজে টেলিফোন দপ্তরের কর্মী ছিলেন । ডিপার্টমেন্ট থেকেই ফোনটা বরাদ্দ করা ছিল। তখন ছয় সংখ্যার নম্বর ছিল। নম্বরটাও আমার মনে আছে এখনও। সেটা আর উল্লেখ করছি না কারণ তার প্রাসঙ্গিকতাই আর নেই এখন। মহুয়া সবসময় ডায়েরি মেইনটেইন করতো আমি জানি। কোন তারিখে কোথায় , কখন " কাজ " করতে হবে সেটা লিখে রাখতো । এবং বছর শুরুর আগে আমার দায়িত্ব ছিল ডায়েরির প্রথম পাতায় সুন্দর করে ওর নামটা লিখে দেওয়া। তিন-চার রকমের কালি দিয়ে লিখে দিতে হবে। এই কাজটা আমি অন্তত চার-পাঁচ বছর করেছি মনে আছে। আমার হাতের লেখা নাকি খুব সুন্দর ছিল বলেই এই আবদার । শুটিংকে ও সিরিয়াসলিই নিতো বরাবর । যে কারণেই চট করে সুখ্যাতি অর্জন করতে পেরেছিল । ভেবে দেখুন , মোটামুটি 1972 থেকে 1985-র জীবনের শেষদিন পর্যন্ত মোটামুটি 13-14 বছরে ডাবলু বেশি নয়, মাত্র 94-টা ছবি পুরোটাই , 3-টে ছবি অর্দ্ধসমাপ্ত করে যেতে পেরেছিল। যখন চলে যায় তখন তিনটে ছবির কাজ চলছে , সাতটা ছবি লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শুটিং শুরু হবে বলে। কোন্ উচ্চতায় তুলে নিয়ে যেতে পারলে এটা করা সম্ভব ? তাও আবার টালিগঞ্জে, বাংলা ছবির জগতে । বলিউড নয় কিন্তু । অনেকেই জানেন না , উত্তমকুমারের পর ওই ছিল প্রথম " একলাখি " অভিনেতা। উত্তমকুমার নিতেন এক লাখ পঁচিশ -ত্রিশ হাজার টাকা আর 1982-তে মহুয়া নিতো পাক্কা এক লাখ টাকা প্রতি ছবিতে।
☆☆ ব্যক্তিগত সম্পর্কের কথা বলি। ডাবলু বারেবারেই বলতো " দাদা তুই তো আর ভালবাসা-টাসা করলি না । তুই তো সম্বন্ধ করেই বিয়ে করবি । ঠিক আছে , অসুবিধা নেই। তবে আমি কিন্তু বলে দিচ্ছি , তোর জন্য পাত্রী পছন্দ করার আগে আমি নিজে যাবো , দেখবো কে আমার বৌদি হবে । আমার পছন্দ হলে তবেই তুই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে পারবি ।" তিলক আর পিনাকীও ওর পোঁ ধরেছিল। আমি বলেছিলাম " মাথা খারাপ নাকি রে তোর ? তুই এখন নামিদামী নায়িকা তোকে নিয়ে পাত্রী দেখতে গেলে হুজ্জুতি পড়ে যাবে রে। মেয়ের বাড়ির লোকজন, পাড়াপড়শিরা তো ছেঁকে ধরবে আমাদের । উরে ব্বাস, পাত্রী দেখতে মহুয়া রায়চৌধুরী এসেছেন ? পাত্রের তো বিশাল ফিল্ড । নায়িকাকে নিয়ে এসেছে মেয়ে দেখতে ? " বাস্তবে কিন্তু সেরকম কিছু হয়নি।
☆☆ আর একটা ঘটনার কথা মনে পড়ে গেল । আমি তখন চাকরি করছি , নাইট সেটে ডিউটি । অফিসের ফোন নং ওকে দেওয়া ছিল। তখন লাউঞ্জ বিল্ডিং-এই চাকরি করি । আমাদের অফিসে স্টাফ ক্যান্টিন আছে । সেটা তখন ছিল উল্টোদিকের হলুদ রঙের D.O. HRO. SRO বিল্ডিংয়ের মধ্যেই। সইসাবুদ করে ক্যান্টিনে গেছি চা খেতে । এরকম সময়ে ডাবলু অফিসে ফোন করেছে। ধরেছিলেন সেকশনের বড়বাবু । তাঁকে শুধু ও বলেছিল " কমল ব্যানার্জিকে বলবেন দমদম টেলিফোন কোয়ার্টার থেকে একজন ফোন করেছিল ।" ভাল কথা , চা খেয়েটেয়ে এসে তো আমরা যে যার কাজে লেগে পড়েছি । ঐ বড়বাবু ব্যাটা আমাকে বলতেই ভুলে গেছে। তখন প্রায় রাত এগারোটা হবে । তখন বড়বাবু আমাকে বলছেন " কমল সন্ধ্যাবেলায় দমদম টেলিফোন কোয়ার্টার থেকে একজন মহিলা তোমাকে ফোন করে খুঁজছিলেন । তোমাকে বলতেই ভুলে গেছি ।" আমি তো বুঝলাম কে করেছে । এবার আমার পেছনে সবাই লাগা শুরু করলো । কি ব্যাপার? রাতের বেলায় মহিলা ফোন করছেন , তাও বাড়ির কেউ না । নিশ্চয়ই কিছু ব্যাপার আছে । বাধ্য হয়েই আমি বলেই দিলাম " আপনি এত রাতে আমাকে জানাচ্ছেন? ছিঃ। ছিঃ। কোনও জরুরি দরকার ও তো থাকতে পারে নাকি ? কে ফোন করেছিল জানেন ? আপনাদের বাংলা ছবির নায়িকা মহুয়া রায়চৌধুরী , আর কেউ নয় । ও কে হয় জানেন ? আমার বন্ধুর বোন ।" আসলে ডাবলু একটু ভুল করেছিল । সেটা হোল ও যদি নিজের নামটা বলতো যে মহুয়া রায়চৌধুরী বলছি । কমল ব্যানার্জিকে চাই। তাহলে সুড়সুড় করে বড়বাবুর মনে পড়ে যেতো । অত রাত হতোনা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন