শিপ্রা থেকে মহুয়া রায়চৌধুরীতে রূপান্তর তাঁর হাতেই । মহুয়াকে নিজের মেয়ের মতোই দেখতেন তরুণ মজুমদার । ইন্ডাস্ট্রিও জানত বা এখনও জানে মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়, দেবশ্রী রায় এবং মহুয়া রায়চৌধুরী হলেন তরুণ মজুমদারের তিন মানসকন্যা । তাঁদের মধ্যে মহুয়া রায়চৌধুরীকে জীবনের মঞ্চ থেকে বিদায় নিতে হয় অকালেই । তাঁর মৃত্যুতে গভীরভাবে আহত হন প্রয়াত পরিচালক ।
সাধারণ পরিবারের মেয়ে মহুয়া ছিলেন পরিচালক তরুণ মজুদারের 'আবিষ্কার' । অভিনয়ের জন্য তাঁকে পরিশীলিত তথা গ্রুমিং করেছিলেন সন্ধ্যা রায় । ১৯৭৩ সালে তরুণ মজুমদারের পরিচালনায় মুক্তি পায় মহুয়া অভিনীত প্রথম ছবি শ্রীমান পৃথ্বীরাজ । বক্স অফিসে এই ছবি ছিল সুপারডুপার হিট । এর পর মহুয়াকে আর ছবির জন্য অপেক্ষা করতে হয়নি । 'সেই চোখ', 'বাঘবন্দি খেলা', 'কবিতা', 'বেহুলা লখিন্দর', 'শেষরক্ষা', 'সুবর্ণগোলক', 'সেই সুর', 'সাহেব', 'কপাকুণ্ডলা', 'ইমনকল্যাণ', 'অমৃতকুম্ভের সন্ধানে', 'পারাবত প্রিয়া', 'তিল থেকে তাল'-সহ একাধিক বক্সঅফিস সফল ছবির নাযিকা ছিলেন মহুয়া ।
সৌন্দর্য, ব্যক্তিত্বের পাশাপাশি বলিষ্ঠ অভিনয়ে অনুরাগীদের মুগ্ধ করেছিলেন তিনি । তাঁর স্বপ্নের উড়ান মুখ থুবড়ে পড়ে ১৯৮৫ সালের ২২ জুলাই । নিজের বাড়িতে ভয়ঙ্করভাবে অগ্নিদগ্ধ হয়ে প্রয়াত হন তিনি । সে সময় মহুয়া ছিলেন টালিগঞ্জের প্রথম সারির নায়িকা । একসঙ্গে কাজ করছিলেন বা করার কথা ছিল ১৫ টি ছবিতে । তাঁর মৃত্যুর পর মুক্তি পেয়েছিল 'অনুরাগের ছোঁয়া', 'প্রেম ও পাপ', 'অভিমান', 'আশীর্বাদ', 'কেনারাম বেচারাম'-এর মতো ছবি ।
মহুয়া রায়চৌধুরীর মৃত্যু আজও রহস্যের ধোঁয়ায় ঘেরা । প্রচুর জলঘোলা হলেও এর উপর থেকে যবনিকা আজও ওঠেনি । মহুয়ার অকালমৃত্যু প্রসঙ্গে তরুণ মজুমদার বলেছিলেন, " অতি অল্প সময়ের জন্য সে এসেছিল ৷ অভিনয় দিয়ে সবার মন জয় করে অকালেই সে চলে গেল সবার চোখের আড়ালে ৷ " জীবনে মৃত্যু নিষ্ঠুর, মানতেন তরুণ মজুমদার । কিন্তু বলেছিলেন তাঁর কন্যাসম মহুয়ার বেলায় যে মৃত্যু দেখতে হয়েছিল, সেরকম নিষ্ঠুর মৃত্যু যেন তাঁকে আর না দেখতে হয় ।