দেবশ্রী রায় লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
দেবশ্রী রায় লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

অদ্বিতীয়া মহুয়া : ছ'জন অভিনেত্রীর চোখে


রত্না ঘোষাল

এগারোই জুলাই বিকেলে মৌ আমার বাড়িতে এসেছিল। এই ঘরে বসেই অনেক আড্ডা হল। সেদিন হেস্পতিবার, 'তপন থিয়েটারে' আমাদের 'নাগপাশ' নাটকের চারশো নাইট-এর উৎসব। সাড়ে পাঁচটার সময় দুজনে একসঙ্গে বেরোলাম। ও বাড়ি চলে গেল। সেদিন মাঝরাতে হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়া! ধড়ফড় করে উঠে জানলা দিয়ে দেখি তিলক, মৌ-এর স্বামী। আগুনে ভয়ঙ্করভাবে পুড়ে যাওয়া মৌকে হাসপাতালে পৌঁছে তিলক এসেছে আমাকে নিয়ে যেতে। তখুনি বেরিয়ে পড়লাম । রাত তখন আড়াইটে। শুনলাম, রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ খাবার গরম করতে গিয়ে কেরোসিনের স্টোভ বার্স্ট করে নাকি এই দুর্ঘটনা !

ক্যালকাটা মেডিক্যাল রিসার্চ ইন্সটিটিউটে যমে মানুষে টানাটানি চলল এগারো দিন। ডাক্তার-নার্সদের চেষ্টার ত্রুটি ছিল না। ওর বাড়ির লোকেদের, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির মানুষদের, ওর ভক্ত আর দর্শকদের এত পুজো, মানত এবং আশীর্বাদ, ভালবাসা বিফলে গেল । প্রাথমিক বিপদটা কিন্তু কেটে গিয়েছিল। প্রায় রোজই কথাবার্তা হয়েছিল আমার সঙ্গে শরীরের নাইনটি পার্সেন্ট অংশ পুড়ে গেলেও, দুর্ঘটনার বাহাত্তর ঘণ্টা পর ডাক্তাররা বলেছিলেন, এর সুস্থ হয়ে ওঠার চান্স যথেষ্ট। প্লাস্টিক সার্জারি করে শরীরের পোড়া জায়গা আগের মতো স্বাভাবিক করে ফেলাও কঠিন নয়। রোববার, একুশে জুলাই সকালেও দেখা করেছি এর সঙ্গে, অনেক কথা হয়েছে । তখন একবারও মনে হয়নি, সেটাই শেষ দেখা। সোমবার সকালে টেলিফোন পেলাম, ভোর পাঁচটা পঞ্চান্নতে মৌ চলে গেছে।

আমার ডাকনাম মাটু। মৌ ছিল 'মা' বলতে অজ্ঞান। সুখে-দুঃখে, আনন্দ-বেদনায় একে অপরের কাছে সঁপে দিতাম নিজেদের। যে-কোনো সামান্য সমস্যাতেও মৌ ছুটে আসত আমার কাছে। সেটা বোধহয় ঊনসত্তর সাল, পাইকপাড়ায় আমাদের বাড়ির পাশেই ছিল ওর মামার বাড়ি। একদিন এসে আলাপ করল আমার সঙ্গে। शি- টারে, সিনেমায় আমার অভিনয় নাকি এর খুব ভাল লাগে। বেশ লাগল মেটোকে ওর ছটফটানি, হুড়মুড় কলা, ছেলে- 1. সহজে যে কোনো মানুষকে আপন করে নেওয়ারও আশ্চর্য ক্ষমতা! বাহাত্তর- তিয়াত্তর সালে মৌ ान । তরুণ মজুমদারের 'শ্রীমান পৃথ্বীরাজ' ছবিতে। তারপর যখন উনিশশো ছিয়াত্তর সালের এপ্রিল মাসে 'তপন থিয়েটারে' সত্য বন্দ্যো পাধ্যায়ের 'নহবত' নাটকে অভিনয় করল, ঘনিষ্ঠতা ও অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব হল। পঞ্চাশ-ষাট নাইট অভিনয় করেছিল আমাদে সঙ্গে, বিয়োর কনে রেখার ভূমিকায়।

মৌ-কে ঘিরে কত স্মৃতি, কত ফোটো। সবই কেমন অগোছালো হয়ে আছে। স্মৃতি হাতড়ে এখন খুঁজে বেড়াচ্ছি আমার প্রিয় বোন, বান্ধবীকে। 'ভারতী' সিনেমার টিকিট কেটে 'দাদার কীর্তি' দেখতে যাওয়া, নিউ মার্কেটে হৈ হৈ করে মার্কেটিং, লেক-মহাদানের মেলায় নাগরদোলায় চাপা--1 ফোটোগুলোও সব অ্যালবামে সাজিয়ে রাখা হয়নি। জানেন, মৌ যখন প্রেম করছে তিলক চক্রবর্তীর সঙ্গে, আমিই ছিলাম ওর গাইড আস্ত ফিলসফার। তর বাবার মত ছিল না এই বিয়েতে। মৌ এসে চেপে ধরল, আমরাই তোড়জোড় করে বিয়েটা দিলাম। ছিয়াত্তর সালের পয়লা মে রেজি সময় দু-পক্ষের অভিভাবক হিসেবে সই করেছিলেন বুড়োদা মানে তরুণকুমার এবং মতাদা। ওহ, মৌ-এর আট বছরের ছেলে তমাল ওরফে গোলা-র জন্য ভীষণ মন খারাপ লাগছে ।...... সবচেয়ে দুঃখের ব্যাপার, থা জুলাই ওর বাংলাদেশে চলে যাবার কথা ছিল, 'উশিলা' ছবির শুটিং করতে। ভিসা না পাওয়ায় যাওয়া হল না। ঢাকায় চলে গেলে হয়তো এভাবে মরতে হত না ওকে। দোসরা জুলাই রাতে মৌ লাস্ট শর্ট দিয়েছে বীরেশ চট্টোপাধ্যায়ের আশীর্বাদ' ছবিতে।

অভিনেত্রী মহুয়া রায়চৌধুরীর তুলনা মহুয়া নিজেই। মৌ হয়তো তথাকথিত গ্ল্যামার-স্টার ছিল না, ওর চেয়ে জনপ্রিয় অভিনেত্রীও টালিগঞ্জে আছেন, কিন্তু শুধুমাত্র অভিনয়ের দিক থেকে ওর ধারে-কাছে আসতে পারেন, এমন নায়িকা এখন বাংলা ছবিতে নেই। নানারকম চরিত্রেই ওকে মানাত, অসাধারণ কাজও করত। সুচি সেন, মাধব মুখোপাধ্যায়, অপর্ণা সেনের পর রোমান্টিক নায়িকা হিসেবেও মৌ-এর তুলনা হয় না। কল্পতরুর 'পরবেশ' বা আরো দু-একটা ছবি ছাড়া, ওর সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ সেভাবে পাইনি, কিন্তু একজন দর্শক হিসেবে ওর ফিল্ম পারফরমেন্স দেখে আমি মুগ্ধ। শঙ্কর ভট্টাচার্যর 'শেষরক্ষা', তরুণ মজুমদারের 'দাদার কীর্তি', পিনাকী মুখোপাধ্যায়ের 'কপালকুণ্ডলা', সলিল দত্তর 'রাজেশ্বরী' বা তপন সিংহর 'আদমি আউর আউরত' ছবিতে মৌ-এর অভিনয় ভুলতে পারব না। কোনোদিন।

দেবশ্রী রায়

কিছু ভাল লাগছে না। বাংলা ছবিতে নায়ক-নায়িকার এত অভাব, তার মধে মহুয়াদির মতো পাওয়ারফুল অ্যাকট্রেস চলে গেলেন। খানিক আগে তনুদা এসেছিলেন। খুব ভেঙে পড়েছেন। রমাপ্রসাদ চক্রবর্তীর 'রেজার সাহেব' ছবিতে প্রথম অভিনয় করেছিলাম মহুয়াদির সঙ্গে। তখন আমি নেহাতই ছোট। অনুদার 'দাদার কীর্তি' ছবির শিমুলতলার আউটডোরেই মহুয়াদির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা।

সহশিল্পী হিসেবে অভিনয়ের অনেক খুটিনাটি ব্যাপার শিখতেও পেরেছি এর কাছ থেকে। রোম্যান্টিক চরিত্রে দারুণ লাগত মহুয়াদিকে।

ছেলেবেলায় আমি এবং আমার দিদি মা যখন রুমকি কুকি নামে রেকর্ড-ড্যান্স করতাম বিভিন্ন ফাংশানে মহুয়াদিও তখন রেকর্ড-ড্যান্স প্রোগ্রাম করতেন। মাঝে মাঝেই দেখা হয়ে যেত। ওঁর আসল নাম শিল্পা। সোনালি নামে নাচতেন। অত-শত মনে নেই, মাঝের কাছে শুনেছি, ভীষণ ভাল পারফরমেন্স ছিল মহুয়াদির। यদ অন না আসতেন, হয়তো নৃত্য- শিল্পী হিসেবেই নাম করতেন।'

রুমা গুহঠাকুরতা


মৌ-এর মৃত্যুর খবর পেয়ে বোবা হয়ে গিয়েছিলাম। তারপর তো দেখা দেখতে গেলাম। সেদিন থেকেই মেন্টালি বড্ড ডিস্‌টার্ব বোধ করছি। মৌ নেই, বিশ্বাস হচ্ছে না। এটা আমার পার্সোনাল লস ও তো আমার বড় মেয়ে, সত্যি সত্যিই মেয়ে আমাকে রুমা-মা বলে ডাকত।

নির্মল মিত্রের 'পরিচয়' ছবির শুটিংয়ে মৌ-এর সঙ্গে আলাপ। এই শিমুলতলার আউটডোরেই ওকে ভালবেসে ফেলেছিলাম । ভারী মিষ্টি মেয়ে, চোখে-মুখে কথা বলত, সহজে আপন করে নিতে পারত সবাইকে। একসঙ্গে প্রথম ছবিতে কাজ করেই বুঝে- ছিলাম, অভিনয়ের সহজাত ক্ষমতা আছে ওর। অসম্ভব প্রতিভাময়ী। পরে আরো দুটো ছবিতে কাজ করেছিলাম ওর মায়ের ভূমিকায় – শঙ্কর ভট্টাচার্যর 'দৌড়', ও তনুবাবুর 'দাদার কীর্তি'। আর এই তো, জুন মাসের শেষাশেষি জহর বিশ্বাসের 'অনুরাগের ছোঁয়া' ছবিতে ওর শাশুড়ির রোল করলাম। একটা ভীষণ সত্য কথা সরাসরি বলা দরকার। রিসেন্ট টাইমস--- ধরা যাক, ষাট দশকের গোড়া থেকে এই পঁচাশি সাল পর্যন্ত যদি হিসেব করি, মাধব মুখোপাধ্যায় ও অপর্ণা সেনের পর এত বড় মাপের অভিনেত্রী বাংলা ছবিতে আর আসেনি। ইয়ং এজে দারুণ দেখতে ছিল আর অপর্ণা তো রূপসী বটেই। মৌ সে তুলনায় খুবই সাধারণ চেহারার। গ্ল্যামারাস সুন্দরী তো ছিল না। তবে ওর আটপৌরে লাবণার টানটাই ছিল অসাধারণ । আর কী চমৎকার, মিষ্টি হাসি! হয়তো শাবানা আজমি বা স্মিতা পাতিলের থেকেও ভাল অভিনেত্রী ছিল মৌ। নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ সেভাবে বড্ড দুঃখী মেয়ে ছিল অনেক চাপা কষ্ট, গোপন বেদনা ছিল ওর মনের গভীরে। আমাকে কখনোই বলেনি কিছু। হয়তো বলতে চায়নি। কিন্তু আমি তো ওর মা ঠিক বুঝতে পারতাম ।


সুমিত্রা মুখোপাধ্যায়

মহুয়া নিজেই জানত না ও কত বড় অভিনেত্রী ছিল। শঙ্করবাবুর 'দৌড়', তনুদার 'দাদার কীর্তি', নবোদু চট্টোপাধ্যায়ের "আজ কাল পরশুর গল্প' বা তপনদার 'আদমি আউর আউরত' ছবিতে অভিনয়ের জন্য আমাদের মধ্যে চিরকাল বেঁচে থাকবে মহুয়া। সহশিল্পী হিসেবেও বারে বারে টের পেয়েছি এর অসাধারণত্ব। মহুয়ার সঙ্গে আমার পরিচয় নির্মল মিত্রের 'পরিচয়' ছবির শিমুলোর শুটিংয়ে, বোধহয় পঁচাত্তর সালে। তারপরেও যে কত ছবিতে কাজ করেছি একসঙ্গে। শঙ্করবাবুর 'শেষরক্ষা', দীনেন গুপ্তর 'প্রিয়তমা' ও 'শঠে শাঠাৎ', বিমল রায়ের 'শেষ বিচার', শচীন অধিকারীর 'সমা', অমল দত্তর 'বোধন', অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়ের 'প্রায়শ্চিত্ত' ও 'কেনারাম বেচারাম',

, বিমল ভৌমিকের 'আমার পৃথিবী', শান্তিময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'তিল থেকে তাল', উমানাথ ভট্টাচার্যর 'প্রেম ও পাপ' বোধহয় আরো দু-চারটে ছবি। নানা রকমের রোল করেছে মহুয়া। কোনো বিশেষ চরিত্রে স্ট্যাম্পড হয়ে যায়নি। হতে দেয়নি। যে কোনো চরিত্রের ভেতরে ঢুকে যেতে পারত অনায়াসে। চরিত্রগুলোর আলাদা ডায়মেনশন দিতে পারত।

কাজ করতে গিয়ে অনেক সময়েই মতের মিল হয়নি মহুয়ার সঙ্গে। ছোটখাটো ঝগড়া বা মনোমালিন্যও হয়েছে। সেসর ভুলে যেতে কিন্তু কারোরই বেশি সময় লাগত না। মহুয়া ছিল একাধারে আমার বোন এবং বান্ধবী। ওর মনটাও ছিল বড়, বিশাল। পশুপাখিদেরও কী ভালবাসত !

অপর্ণা সেন

মধুয়ার মৃত্যু আমাকে কতটা মর্মাহত করেছে, বোকাতে পারব অ্যাকটিং-এর এরকম ম্যাচিওরিটিতে পৌঁছে মেয়েটা চলে গেল। ভাবা যায় না! পঁচাত্তর সালে ইন্দর সেনের 'অসময়' ছবিতে যখন

প্রথম একসঙ্গে কাজ করি, তখনই টের পেয়েছিলাম, মহুয়া খুব ট্যালেন্টেড মেয়ে। কিছুদিন আগে দিলীপ রায়ের 'নীলকণ্ঠ ছবিতেও আবার কাজ করলাম একসঙ্গে। মহুয়া অভিনয় করত একেবারে ভেতর থেকে। হয়তো খুব একটা ভাবনা-চিন্তা না করেই। স্পন্টেনিয়াস। অভিনয়টা এর সহজাত। টাইমিং সেন্স বা সেন্স অব রিদম ছিল অসাধারণ । বেজায় ডাকাবুকো মেয়ে ছিল। নিয়ম-কানুন মেনে চলা পছন্দ করত না। নিয়ম ভাঙতেই যেন আনন্দ । এবং অসম্ভব প্রাণ-প্রাচূর্যে ভরা। এমনিতেই বাংলা ছবি কম দেখি। মহুয়ার অনেক ছবিই দেখিনি। তবে 'অসময়' বা 'দাদার কীর্তি দেখে আই ওয়াজ হাইলি ইমপ্রেসড। নিজের পরিচালিত ছবিতে ওকে ভীষণভাবে ইউজ করার কথা ভেবেছিলাম । সে সুযোগ আর পাব না। তবে আমার 'পরমা' ছবিতে যখন এক বিধবা পাগলি মেয়ের ছোট্ট চরিত্রে কাজ করার অফার দিলাম, রাজি হয়ে গেল। সেটা হয়তো আমার প্রতি ওর শ্রদ্ধা, ভালবাসা বা থে থেকে। ছোট হলেও চরিত্রটা ে গুরুত্বপূর্ণ, সেটা ও টের পেয়েছিল। অভিনয় জানা কোনো মেয়োর দরকার ছিল চরিত্রায়। অ্যাও শি ডিড ইট ভেরি হ্যাপিলি ।

ইন্দর সেন পরিচালিত 'পিপাসা' ছবিতে মহুয়া রায়চৌধুরী ও দীপঙ্কর দে আমাদের ঠিক পরের ব্যাচে যারা এসেছে টালিগঞ্জে, এই ফ্রম দ্য রে আি সেভেন্টিজ, তাদের মধ্যে মহুয়া ছিল সবচেয়ে ট্যালেন্টেড অভিনেত্রী। বেস্ট অব দ্য ট সত্যিই অদ্বিতীয়া।


মাধবী চক্রবর্তী

আমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না। মহুয়া নেই। ভাবতেই পারছি না ওর হাসি দেখতে পাব না, ওর রাগ দেখতে পাব না। কিছুতেই মনে করতে পারছি না মহুয়া মা বলে ডাকবে না। প্রতিদিন রাত সাড়ে দশটায় মহুয়া কেমন আছে জানবার জে অপেক্ষা করতাম। রত্নার কাছে টেলিফোন করতাম। ওর কাছ থেকে সব খবর নিতাম। আস্তে আস্তে আশা হচ্ছিল ও নিশ্চয়ই ভাল হয়ে যাবে। বেঁচে যাবে। মহুয়াকে হস্ত ভালবাসতাম। ও ছিল আমার বড় মেয়ে। ওকে প্রথম দেখি 'পৃথ্বীরাজ' ছবিতে। সেই ছবিতেই মহুয়াকে আমার ভাল ল তারপর তারকেশ্বরে একটা সিনেমা হাউস উদ্বোধন করতে গিয়ে সরাসরি দেখি মহুয়াকে। দেখলাম ও একমুখ পান নিয়ে চিবুচ্ছে। মুখটা কেমন টকটকে লাল করে একটা ছোট্ট মেয়ে এদিক-ওদিক ঘুরছে। ভারী সুন্দর দেখাচ্ছিল। এরপর সুভাষ ইনস্টিটিউটে 'কলার' নাটক করতে গিয়ে মহুয়ার সঙ্গে আবার দেখা এবং সেই থেকে ঘনিষ্ঠতা শুরু। আমি 'সুবর্ণলতা' ছবির জন্যে মেয়ের ভূমিকায় একটি নতুন মেয়ে দু' বারবার মহুয়ার কথাই আমার মনে হয়েছিল।

ওকে বলতেই ও দারুণ খুশি। 'সুবর্ণলতা'র শুটিংয়ে ওকে আমি প্রতিদিন নিজের হাতে সাজিে দিতাম। 'সাহেব' ছবির শুটিং চলছে। হঠাৎ মহুয়া এসে প্রণাম করল। বললাম, হঠাৎ প্রণাম কেন ? মহুয়া মিষ্টি হেসে বলল, মা, আজ সবচেয়ে বেশি টাকার একটা কনটাক্ট সই করলাম। তাই তোমায় প্রণাম করলাম। মধুয়া ও তিলক যখন-তখন আমার বাড়িতে আসত। শুটিং শেষে ক্লান্ত হয়েও আসত মহুয়া থেকেছে। খেয়েছে। আমার মেয়েদের সঙ্গে এক খাটে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি সকালবেলায় ডেকে দিয়েছি। সকালে খাবার খাইয়ে স্টুডিয়ো পাঠিয়েছি। এমন অনেক ছোট্ট ছোট্ট স্মৃতি মনে পড়ছে। এ তো গেল আমার মেয়ে মহুয়ার কথা। শিল্পী মহুয়ার কথা বলতে গেলে বলতে হয় ওর মতো সুন্দর মুখ আমি আর খুজে পাচ্ছি না। এর অভন ক্ষমতা যে রানি ছিল ा ধারা 'আদমি আউর আওরত' দেখেছেন তারা বুঝতে পারবেন। ও বেঁচে থাকলে আমার থেকে অনেক বড় শিল্পী হতে পারত। মহুয়ার চলে যাওয়ায় বাংলা সিনেমা শিল্পের বড় ক্ষতি হয়ে গেল। মধুয়ার থেকে ভাল শিল্পী আসতে পারে কিন্তু মধুয়া আসবে না। উত্তমবাবু চলে গিয়ে বড় ফাক রেখে গেছেন। মহুয়াও গ্যাপ সৃষ্টি করে গেল। তবে উত্তমবাবু অনেক কিছু দিয়ে গেছেন। আর এই মেয়েটা যখন সবে কাজ শুরু করেছিল তখনই চলে গেল।

এ মৃত্যু বড় কষ্টদায়ক। এর কোনো সান্ত্বনা নেই।

এর সঙ্গে শেষ দেখা হয়েছিল অক্ষয় তৃতীয়ার দিন একটি ছবির মহরত অনুষ্ঠানে। দুর্ঘটনার পর প্রথমদিন হাসপাতালে গিয়ে- ছিলাম। রত্না বলল, 'তুমি দেখো না। দৃশ্য তুমি সহা করতে পারবে না।" ভাই ভেতরে না ঢুকেই চলে এলাম।

আশা ও ভালবাসার জোরে সব সময় ভেবেছি ভাল হবে। কিন্তু আর দেখা হল না । মৃত্যুর পরও ওর মুখখানা দেখতে পেলাম না। সাদা চাদর দিয়ে মেয়েটার গোটা শরীরটা ছিল ঢাকা।

দু-সপ্তাহ আগে আমার বাবা ও মাসিকে চিরতরে হারিয়েছি। এদের মৃত্যুর ব্যাপারে আমার মানসিক প্রস্তুতি ছিল, কিন্তু মহুয়া আমায় দারুণ আঘাত দিয়েছে। এখনো পর্যন্ত মহুয়ার চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসতে পারছি না। কাজকর্ম কিছু ভাল লাগছে না। করতে হয়, করে যা


মহুয়ার মৃতদেহের পাশে টেকনিসিয়ান স্টুডিওতে অশ্রুসজল চোখে উৎপলেন্দু চক্রবর্তী, রুমা গুহঠাকুরতা, মাধবী চক্রবর্তী ও আরও অনেকে


দেবশ্রী রায় মহুয়া রায়চৌধুরী নিয়ে কথা বলেছেন তার 37তম মৃত্যুবার্ষিকীতে

মহুয়া রায়চৌধুরীকে আমি ছোট্ট থেকে চিনি। আমি আর আমার দিদি কৃষ্ণা রুমকি-চুমকি নামে নাচ অনুষ্ঠান করতাম। মহুয়াদিও তখন তেমনই শিশু নৃত্যশিল্পী। বাড়ির নাম শিপ্রা। পোশাকি নাম সোনালি রায়চৌধুরী। ওঁর বাবা আমার মাকে বৌদি বলে ডাকতেন। সেই সময়ে একটি অ্যামেচার ক্লাব প্রতি রবিবার ছোটদের নাচের অনুষ্ঠানের আয়োজন করত। আমরা তো যেতামই। মাঝেমধ্যে মহুয়াদিও অংশ নিতেন। সেই মহুয়াদি অভিনয়ে এলেন আমারই মতো। তরুণ মজুমদারের হাত ধরে। তনুদা ওঁরও নাম বদলে রাখলেন মহুয়া। প্রথম ছবি ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’।


এর পরেই আমরা একসঙ্গে ‘দাদার কীর্তি’ ছবিতে। তত দিনে মহুয়াদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। এক ছেলে গোলা-ও এসেছে কোলে। সে সব মায়ের মুখে শুনেছিলাম। আমাদের বয়সের অনেক ফারাক। তাই দিদি মায়ের সঙ্গে বেশি কথা বলতেন। আমার মা ছিল ওঁর ‘মাসিমা’। আমরা মহুয়াদির বর তিলক চক্রবর্তীকেও চিনতাম। তিলকদা মঞ্চে কিশোরকুমারের গান গাইতেন। সেই থেকেই প্রেম। মাকে বলেছিলেন, ‘‘মাসিমা, আমরা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছি।’’

সেটে কম কথা হলেও একটা জিনিস খেয়াল করতাম। দিদি বেশ মেজাজি। এই হাসিখুশি, কিছু ক্ষণ পরেই বেজায় রেগে গিয়েছেন। খুব রগচটা ছিলেন। আর রেগে গেলে অনেক সময়েই যা মুখে আসত, তা-ই বলতেন। শুনেছি, তখন নাকি গালিগালাজও করে বসতেন অনেককে। মাথা ঠান্ডা হলেই আবার সব ঠিক। এ সব দেখে এক এক সময়ে মনে হত, সংসার জীবনে কি সুখী ছিলেন না মহুয়াদি? প্রায়ই ওঁকে দেখতাম কেমন যেন অশান্ত। কিন্তু রূপটান নেওয়ার পর সে সব ভুলে যেতেন। অভিনয়ে কোনও দিন কোনও খামতি রাখতেন না।

আর ছেলে অন্তপ্রাণ ছিলেন। একমাত্র ছেলেকে চোখে হারাতেন। টালিগঞ্জের খুব কাছেই ভাড়াবাড়িতে থাকতেন ওঁরা। তখন ‘দাদার কীর্তি’র শ্যুট চলছে। এক বার শ্যুটের পরে নাকি তিলকদার বাইকে চেপে মহুয়াদিকে রাস্তায় ঘুরতে দেখেছিলেন সন্ধ্যা রায়। পর দিন মহুয়াদি স্টুডিয়োয় আসতেই তোড়ে বকুনি। সন্ধ্যাদির বক্তব্য, নায়িকাদের পথেঘাটে ঘুরতে দেখা গেলে আকর্ষণ থাকবে? বকুনি খেয়ে মুখ কাঁচুমাচু করে ফের আমার মায়ের কাছেই মহুয়াদি। বিষণ্ণ গলায় বলেছিলেন, ‘‘সন্ধ্যাদি কী বকলেন!’’ মা সে দিন বুঝিয়েছিলেন, সন্ধ্যাদি সবার মায়ের মতো। মায়েরা তো সন্তানদের ভাল-মন্দ বলবেনই, আগলাবেনও।

‘দাদার কীর্তি’র পর আরও একাধিক ছবিতে আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি। ‘সুবর্ণ গোলক’ ছবিতে আবার আমরা দুই বোন। ‘পারাবত প্রিয়া’য় মহুয়াদি নার্স হয়েছিলেন। যত ভাল অভিনেত্রী, সম্ভবত ততটাও সংসারী ছিলেন না। এক দিন স্টুডিয়োয় এসে সটান আমার ঘরে। আমি তখন ‘ভালবাসা ভালবাসা’-র শ্যুট করছি। বললেন, ‘‘বললেন, কল শো-তে গিয়ে আমার মেকআপ বক্স হারিয়ে ফেলেছি। তোরটা একটু দিবি? নইলে শ্যুট করতে পারব না!’’ শুনে একটু অবাকই হয়েছিলাম। সে দিন আমার সঙ্গে, তনুদার সঙ্গে অনেক গল্প করেছিলেন। অদ্ভুত ভাবে খুব শান্ত! তার পরে মেকআপ বক্স নিয়ে শ্যুট করতে গেলেন।

পর্দায় আমরা দুই বোন। কিন্তু বাস্তবে একদম বিপরীত। ভাল অভিনয়ের খিদে দু’জনেরই। পর্দা ভাগ করতে গিয়ে দু’জনেই সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করতাম। ফলে, সুস্থ প্রতিযোগিতা ছিল। প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা তলায় তলায় রাজনীতি করা— মাথাতেই আসত না। আরও একটি বিষয়ে মিল। আমার মতো মহুয়াদিও পশুপ্রেমী ছিলেন। স্টুডিয়োয় এসেই প্রথমে সমস্ত কুকুরদের খাওয়াতেন। তার পর কাজ শুরু করতেন। আমার প্রথম হিন্দি ছবি ‘জাস্টিস চৌধুরী’ মুক্তি পেল। তখন ছবির ভিডিয়ো ক্যাসেট পাওয়া যেত। রূপসজ্জাশিল্পী বুড়োকে ডেকে বলেছিলেন, ‘‘তুই আমার বাড়িতে আয়। একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করে আমরা চুমকির ছবিটা দেখব। ও তো আমাদের ঘরের মেয়ে।’’ এই সব গুণের জন্যই আমার মতো মহুয়াদিকেও ইন্ডাস্ট্রি ভীষণ ভালবাসত। ওঁর ‘আদমি ঔর অওরত’ আমার প্রিয় ছবি।

এ সবের মধ্যেই ১৯৮৫ সালে সর্বনাশা ২২ জুলাই। কী করে গায়ে আগুন লাগল? পুড়ে গিয়েছিলেন, না কি অন্য কিছু? সব উত্তর অজানা রেখেই বড্ড অসময়ে চলে গেলেন মহুয়াদি। অনেক কাজ বাকি ছিল। অনেক সম্মানও পাওনা ছিল। সেটে এসেও ছেলের কথা কিছুতেই ভুলতে পারতেন না। সব শিশুর মধ্যেই নিজের ছেলেকে খুঁজতেন। তাই বাচ্চাদের দেখলেই কাজ ফেলে খেলায় মেতে উঠতেন দিব্যি। নিজের ছেলে গোলাকে নিজের হাতে আর মানুষ করাই হল না মহুয়াদির! 


সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

দেবশ্রী রায় মহুয়া রায়চৌধুরীকে যেভাবে দেখেন

 

দাদার কীর্তিতে মহুয়া ও দেবশ্রী

প্রবীণ অভিনেত্রী, দেবশ্রী রায় মহুয়া রায় চৌধুরীর সাথে কিছু মুহূর্ত স্মরণ করেন যিনি 22 জুলাই পর্যন্ত বাংলা সিনেমার শীর্ষ তারকা ছিলেন।

দেবশ্রী রায় বলেন, “আমরা শৈশবে জনপ্রিয় নৃত্যশিল্পী ছিলাম।” তরুণ মজুমদার তাকে শ্রীমন পৃথ্বীরাজ ছবিতে কাস্ট করেছিলেন এবং তার নাম পরিবর্তন করে মহুয়া রাখেন। বিয়ে করার সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১৭। মহুয়া রায়চৌধুরী তিলক চক্রবর্তীকে বিয়ে করেছিলেন, যিনি শিশু শিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রে কাজ করেছিলেন কিন্তু এরপর সিনেমায় তেমন একটা ক্যারিয়ার গড়তে পারেননি। এইভাবে মহুয়া রায়চৌধুরী তার পরিবারের উপার্জনকারী হয়ে ওঠেন। মহুয়া রায়চৌধুরী মাঝে মাঝে বিষণ্ণ থাকতেন।

দেবশ্রী রায় বলেন, "মহুয়া-দি খুব মেজাজি ছিল. কখনও কখনও তিনি অত্যন্ত হাসিখুশি এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ হতেন এবং অন্য সময় তিনি কথাও বলতেন না, আমি তার থেকে বেশ জুনিয়র ছিলাম এবং তাই সে প্রায়ই আমাকে বলত কি করতে হবে আর কি করা উচিত নয়।"

দেবশ্রী রায় একটি আউটডোর শ্যুটের কথা স্মরণ করেছেন যেখানে তিনি মহুয়া রায়চৌধুরীর সঙ্গে ছিলেন। “আমরা শিমুলতলায় শুটিং করছিলাম। সেখানে বৈদ্যুতিক সংযোগ না থাকায় আমরা একটি জেনারেটর নিয়ে গিয়েছিলাম। আমরা একটি প্রাসাদ বাড়িতে থাকতাম এবং পুরো পরিবেশটি বেশ রোমাঞ্চকর ছিল। ঠাকুরের তৈরি আশ্চর্যজনক খাবার ছিল বলে আমরা একসাথে কিছু খুব ভাল সময় কাটিয়েছি। সন্ধ্যা রায়ও আমাদের সাথে ছিলেন এবং তিনি প্রায়ই আমাদের গাইড করতেন এবং বকাঝকা করতেন।”

সুবর্ণ গোলক (1981) ছবিতেও দেবশ্রী রায় মহুয়া রায়চৌধুরীর সাথে কাজ করেছিলেন। "আমি একরকম অনুভব করেছি যে সে কখনই সুখী ছিল না," সে বলেছিল। "সে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছিল কিন্তু তারপর শান্তি পায়নি। সম্ভবত সে কারণেই তার এমন মেজাজ পরিবর্তন ছিল।"

দেবশ্রী রায় মনে করেন যে তার মৃত্যুর রহস্যের সমাধান হয়নি। "প্রকৃতপক্ষে, আমরা এখনও তার মৃত্যুর সত্য সম্পর্কে অন্ধকারে রয়েছি। এটা আমাদের জন্য বেশ হতবাক ছিল. সে সময় অনেক ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন এবং শুটিংয়ে বাংলাদেশে যাওয়ারও কথা ছিল।

1983 সালে, দেবশ্রী একটি হিন্দি ছবি করেছিলেন - জাস্টিস চৌধুরী, মহুয়া বিখ্যাত মেকআপ শিল্পী অরূপ গাঙ্গুলীকে ডেকে বলেন "বুড়ো [গাঙ্গুলীর ডাকনাম], দেবশ্রী, আমাদের কলকাতার মেয়ে, বোম্বেতে একটা ফিল্ম করেছে, আপনি কি আমাকে ক্যাসেটটা দিতে পারেন?" এটা শুনে বেশ আনন্দ হয়েছিল যে পরে তারা সবাই একসাথে বসে আমার ফিল্ম দেখেছিল।

মহুয়ার সাথে শেষ দেখা হওয়ার কথাও দেবশ্রী দুঃখের সাথে স্মরণ করে। তিনি বলেন, "তাকে সম্পূর্ণ ভিন্ন একজন মানুষ মনে হচ্ছিল।" সে সময়ের অন্যান্য শিল্পীর মতো মহুয়া ওয়ান ওয়াল, যাকে এখন যাত্রা বলা হয়, অংশ নিতেন। আমি ভালোবাসা ভালোবাসা (1985) এর শুটিং করছিলাম এবং সে ওয়ান ওয়াল করছিল, যখন সেটে আমাদের দেখা হয়েছিল। আশ্চর্যজনকভাবে, তিনি নিজেই আমার মেকআপ রুমে এসেছিলেন এবং জিজ্ঞাসা করেছিলেন আমি কেমন আছি। আমি তাকে একটি আসন অফার করেছিলাম।"

তখন মহুয়া রায়চৌধুরী বলেন, তিনি বেশ বিরক্ত। দেবশ্রী কেন জিজ্ঞাসা করেছিলেন এবং তিনি উত্তর দিয়েছিলেন যে তিনি একটি যাত্রা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে হবে এবং তার পুরো মেকআপ কিটটি চুরি হয়ে গেছে এবং সেখানে তার দামী জিনিস ছিল। "তারপর তিনি আমাকে ভালোবাসা ভালোবাসায় প্রধান চরিত্রে অভিনয় করার জন্য অভিনন্দন জানালেন এবং হঠাৎ আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন" 

"সেদিন তিনি এতটাই স্নেহশীল ছিলেন যে এটি আমার জন্য আশ্চর্যজনক ছিল কারণ বেশিরভাগ সময়ই তিনি আমার সাথে বেশ কঠোর ছিলেন," দেবশ্রী রায় বেশ আবেগপ্রবণ হয়ে বলেন। "তবে, সেদিন সে আমার সাথে খুব নরম ছিল। এবং কিছু দিন পরে, আমরা দুঃখজনক খবর পেলাম!"

মহুয়া রায়চৌধুরীর কথা বললেন অভিনেত্রী দেবিকা মুখোপাধ্যায়

 মহুয়ার ডাগর-ডোগর মুখটা ক্লোজ আপে কী মিষ্টি লাগত! মহুয়ার রূপে কোনও উগ্রতা ছিল না। গায়ের রং কিন্তু শ্যামলা।  মহুয়ার খুব সাধারণ মধ্যবিত্ত ...