সৌন্দর্য ও রূপচর্চা নিয়ে মহুয়া রায়চৌধুরীর অনবদ্য বিশ্লেষণ

 সেই সময়ের পত্রিকায় সৌন্দর্য ও রূপচর্চা নিয়ে মহুয়া রায়চৌধুরীর অনবদ্য বিশ্লেষণ। এখনকার নায়িকারা একটু এইসব জানলে বাংলা ছবি বাঁচান বলে থেকে থেকে স্লোগান তুলতে হত না। দর্শক স্বতঃপ্রণোদিত ভাবেই বাঁচিয়ে রাখত।





মহুয়ার ৫ম মৃত্যুবার্ষিকীতে তিলক যা বললেন

 মহুয়া রায়চৌধুরীর মৃত্যুর পর, তার স্বামী তিলক চক্রবর্তী ধীরে ধীরে চলচ্চিত্র শিল্প থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। শোনা যায়, ব্যাঙ্কের চাকরি, গান আর ছেলে তমালকে ঘিরেই তাঁর জীবন আবর্তিত হয়।

এমনও শোনা যায়, মৃত্যুর আগে মহুয়া ইন্ডাস্ট্রিতে তার সেরা বন্ধু রত্না ঘোষালকে তার ছেলের দায়িত্ব নিতে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু ঘটনা হল তমাল তার বাবার সাথে ছিল এবং তিলক আর বিয়ে করেনি।

মহুয়ার ৫ম মৃত্যুবার্ষিকীতে তিলক যা বলেন একটি খবরের কাগজে।





ইস্টবেঙ্গলের প্রতি মহুয়া রায়চৌধুরীর ভালোবাসা - প্রতিবেদক রবি বসুর বক্তব্য থেকে নেওয়া

 মহুয়া রায়চৌধুরী ছিলেন ইস্ট বেঙ্গল ফুটবল ক্লাবের একজন ডাই হার্ড ফ্যান। রবি বসুর বইতে মহুয়ার অনেক ঘটনা রয়েছে এবং এই নিবন্ধটি সেই বই থেকে নেওয়া হয়েছে।



"ফুটবল খেলাটাকে প্রচন্ড ভালোবাসত মহুয়া। একদম ছোটবেলা থেকেই। ওর দাদা পিনাকী যখন বন্ধুদের নিয়ে ফুটবল খেলতে যেত , তখন মহুয়াও তাদের পেছন পেছন যেত মাঠে। কেবল দর্শক হিসেবেই নয় , প্লেয়ার কম পড়লে নিজে মাঠে নেমে পড়ে গোলে দাঁড়িয়ে যেত। সেখান থেকেই চিৎকার করে বিপক্ষের খেলোয়াড়দের শাসাত : এই , আমার গোলের দিকে জোরে বল মারবে না বলে দিচ্ছি। আমাকে গোল দিয়ে দিলে তোমাদের সঙ্গে রক্তারক্তি হয়ে যাবে কিন্তু। স্বপক্ষ আর বিপক্ষ উভয় দলের খেলোয়াড়রাই মহুয়ার কথা শুনে হেসে ফেলত।

যেদিন মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের খেলা থাকত , মহুয়া সেদিন সকাল থেকেই খুব টেনশনে ভুগত। কাজেকর্মে ভালো করে মন বসাতে পারত না। সেদিন স্টুডিওতে এসেই ডিরেক্টারকে বলত : আমাকে লাঞ্চের আগে যত পার খাটিয়ে নাও। বিকেলের দিকে খেলা আরম্ভ হলে আমাকে দু'ঘন্টা ছুটি দিতে হবে। ওই সময় আমি খেলা দেখব।
মহুয়াদের একটা ট্রানজিস্টার টিভি ছিল। হাত দুয়েক লম্বা সরু মতন। স্ক্রিনটা বোধহয় ছ'ইঞ্চি বাই ছ'ইঞ্চি হবে। ব্যাটারিতে চলত। তিলক অফিস যাবার সময় ওই টিভি-টা মহুয়াকে দিয়ে যেত। মহুয়া সেটাকে মেক-আপ রুমে কাজের মেয়েটির কাছে রেখে দিত। আমি স্টুডিওতে গিয়ে হাজির হলে বলত : এই রবিদা, আজ আমাদের টিমকে হারাবার চেষ্টা করবে না বলে দিচ্ছি। আমাদের টিম যদি হারে তাহলে তোমার সঙ্গে একচোট হয়ে যাবে কিন্তু।

আমি হাসতে হাসতে বলতাম : আজ তোমাদের টিম হারবেই। আমি আসবার সময় কালীঘাটে মোহনবাগানের হয়ে পাঁচসিকে পূজো দিয়ে এসেছি।

মহুয়া বলত : আমিও দক্ষিণেশ্বরের মায়ের কাছে আড়াই টাকা মানত করে রাখলাম। দেখি তোমরা ইস্টবেঙ্গলকে কেমন করে হারাও।
এইরকম নানা হাসি-ঠাট্টার মধ্যে দিয়ে মহুয়া তার টেনশন কাটাবার চেষ্টা করত। কিন্তু যত বেলা গড়াত ততই তার মুখটা শুকিয়ে যেত। মাঝে মাঝে বলত : কী হবে বলো তো রবিদা ?

আমি ওকে সান্ত্বনা দেবার জন্যে বলতাম : এই মউ, ব্যাপারটাকে এত সিরিয়াসলি নিচ্ছিস কেন বল তো ! খেলাটা তো স্পোর্টস। এটাকে স্পোর্টিংলি নিতে পারিস না ? যারা ভালো খেলবে তারা জিতবে।

মহুয়া মুখ শুকনো করে বলত : না গো রবিদা, ইস্টবেঙ্গল হেরে গেলে বুকের ভেতর যে কী কষ্ট হয় তা তোমাকে বোঝাতে পারব না।
সব থেকে দুঃখের ব্যাপার সেদিন ইস্টবেঙ্গল সত্যিই হেরে গেল। মেক-আপ রুমে বসে ওরই টিভিতে আমরা দুজনে খেলাটা দেখছিলাম।
ইস্টবেঙ্গল হেরে যাবার পর মহুয়ার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে সে কি কান্না ! তখন মনে হচ্ছিল মোহনবাগান হেরে গেলেই বোধহয় ভালো হত। অনেক কষ্টে সেদিন ওর কান্না থামাতে পেরেছিলাম।
আজও যখন টিভিতে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের খেলা দেখি তখন মহুয়ার কথা বড্ড বেশি করে মনে পড়ে যায়। সে যেখানে গেছে সেখান থেকে কি খেলা দেখা যায় ?"

কমল বন্দোপাধ্যায় মহুয়া রায়চৌধুরীর 37 তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর স্মৃতি থেকে স্মরণ করেছেন

 দমদমের বাসিন্দা কমল বন্দ্যোপাধ্যায় শিল্পীকে একদম মেয়েবেলা থেকে দেখেছেন তাঁর দাদার বন্ধু হিসেবে। গত বছরও স্মৃতিচারণ করেছিলেন আজকের দিনে তাঁর হারিয়ে যাওয়া বন্ধুকে নিয়ে। আজ আবার বললেন কিছু কথা। ছোট ছোট মণি মুক্তোয় ভরা সেই সব কথা হুবহু তুলে দিলাম।

❤️❤️ হয়তো আমাকে ভুলে যাবে
স্মৃতিতে আমাকে খুঁজে পাবে ❤️❤️
এবং
❤️❤️ আমি ভালো নেই ❤️❤️
-----------------------------------------------------------------------
** আর কয়েক ঘন্টা বাদেই আসতে চলেছে অভিশপ্ত ২২ জুলাই। " আশীর্বাদ" ছবির এই সংলাপ ও গানের কলি যে এতটা বাস্তব রূপ ধারণ করবে তা বোধহয় জুলাই,১৯৮৫-র আগে কেউ কল্পনাও করতে পারেননি।‌ যে নায়িকার ঠোঁটে এই সংলাপ ও গানের কলি চিত্রায়িত হয়েছিল তাঁর নাম মহুয়া রায়চৌধুরী।
** ২২ জুলাই, ১৯৮৫ , সোমবার, বাংলা চলচ্চিত্র জগতে এক " অগ্নিদগ্ধ অভিশপ্ত" তারিখ যেদিন ইহজগৎ ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন ২৯ বছর বয়সী সকলের প্রিয় নায়িকা মহুয়া রায়চৌধুরী।‌ দেখতে দেখতে দীর্ঘ ৩৭ বছর অতিক্রান্ত, কিন্তু আমার কাছে মনে হয় এই তো সেদিনের ঘটনা। যখন‌ই ভাবি তখনই বহু পুরোনো স্মৃতি মনের মাঝে ভীড় করে আসে।
** ষাটের দশকের শেষার্ধ। সেই সময়ে স্কুলের লেখাপড়ার মেয়াদ উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ছিল ১১ শ্রেণী পর্যন্ত। সেই সময় স্কুলে একটি ছেলের সঙ্গে আলাপ হয়, পরিচয় হয়, বন্ধুত্ব ও হয়। নাম পিনাকী রায়চৌধুরী। ওর মা কলকাতা টেলিফোন অফিসে চাকরি করতেন। দমদমে যশোহর রোডে ক্লাইভ হাউসের পরেই ৫৭ এক্সচেঞ্জ টেলিফোন কোয়ার্টারে পিনাকীরা থাকতো। ওর দুই বোনের এক বোনের নাম ছিল শিপ্রা রায়চৌধুরী। শিপ্রার আরও একটা বিশেষ গুণ ছিল, খুব ভালো নাচতে পারতো। বিভিন্ন বিচিত্রানুষ্ঠানে নাচের অনুষ্ঠান করতো ঐ মেয়েটি। নাচের অনুষ্ঠানে ওঁর পরিচিতি ছিল " সোনালী" বলে। যেহেতু ওঁর মা কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারী ছিলেন, চাকরি করতে হতো তাই ওঁর বাবা নীলাদ্রীবাবু সোনালীকে সব অনুষ্ঠানে নিয়ে যেতেন। যেহেতু আমরা কয়েকজন পিনাকীর বন্ধুস্থানীয় ছিলাম তাই আমাদের সঙ্গেও শিপ্রার যথেষ্ট ভালো " দহরম মহরম" গড়ে উঠেছিল।‌ সেই শিপ্রাই বছর দুয়েকের মাথায় দেখি বাংলা চলচ্চিত্রে নায়িকা হয়ে উঠলেন সর্বজনশ্রদ্ধেয় পরিচালক সদ্যপ্রয়াত তরুণ মজুমদারের হাত ধরে। চলচ্চিত্র জগতে ওঁর নামটাও তরুণ মজুমদার মহাশয় পাল্টে দিলেন, নাম রাখলেন " মহুয়া" । এর আগেও অবশ্য তরুণ মজুমদার আর এক নবাগতা নায়িকা ইন্দিরা চ্যাটার্জীর নাম পাল্টে " মৌসুমী চ্যাটার্জী" রেখেছিলেন। টালিগঞ্জ ও বোম্বের চলচ্চিত্র জগতের নায়িকা মৌসুমী চ্যাটার্জীকে কে না চেনেন? সেই মৌসুমী চ্যাটার্জী আবার সঙ্গীতশিল্পী ও সুরকার হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের পুত্রবধূ হন, সবাই জানেন। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের ভবানীপুরের বাড়িতে মেনকা সিনেমা হলের পাশে আমি গেছি এবং কপালগুণে মৌসুমী চ্যাটার্জীর সঙ্গে কথাও বলেছি। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ঐ বাড়িতে মৌসুমী চ্যাটার্জীর নাম কিন্তু ইন্দিরাই। যাক, আজকের প্রসঙ্গে আসি।
** " শ্রীমান পৃথ্বিরাজ" ছবিতে মহুয়া রায়চৌধুরীর আবির্ভাব। তারপর বহু ছবিতে তিনি অভিনয় করেছেন। আশ্চর্যের বিষয় কি ছিল জানেন? এত নামডাক, এত টাকাপয়সা হ‌ওয়া সত্বেও যা তিনি তাঁর অভিনয় সত্তা দিয়ে আয়ত্ত্ব করেছিলেন মনটা কিন্তু রেখেছিলেন একেবারে খোলামেলা । কোনরকম কূটকাচালি জানতেন বলে আমার বিশ্বাস হয় নি। সবথেকে মজার ব্যাপার ছিল, নিজের দাদার মতোই আমাকেও " দাদা" বলে ডাকতেন সদাসর্বদা। ১৯৭৩ সালে আমার " উপনয়ন" উপলক্ষ্যে নিমন্ত্রণ করেছিলাম। মহুয়া এসেছিলেন রাত দশটা নাগাদ। ততদিনে তিনি নায়িকা হয়ে গেছেন।
** যখন টেলিফোন কোয়ার্টারে থাকতেন তখন তো প্রায় নিয়মিতই আমি যেতাম এবং সেটা বিকেলের দিকে। যারা ঐ টেলিফোন কোয়ার্টারটা চেনেন তাঁরাই জানেন, রাস্তার উল্টোদিকে মেয়েদের কলেজ আছে
" সরোজিনী নাইডু কলেজ" । যেদিন মহুয়া থাকতেন ঐ কলেজের পড়ুয়া মেয়েরা কী করে যেন জেনে যেতো " আজ মহুয়া আছেন" । কোয়ার্টারের সামনের মাঠটাতে ভীড় লেগে যেতো ঐ কলেজ পড়ুয়া মেয়েদের। একবার একটু চোখের দেখা দেখবার জন্য। আর আমিও ঐ ভীড় ঠেলে গটগটিয়ে দোতলায় উঠে যেতাম। একদিন তো মহুয়াকে বলেই ফেললাম ওদের কথা। ওহ! আমি তো মূল কথাটাই বলতে ভুলে গেছি। সেই ১৯৬৯ সাল থেকে যতদিন দুজনের কথাবার্তা হয়েছে একে অপরকে " তুই" বলেই সম্বোধন করেছি। আশির দশকে এত নামডাক হ‌ওয়া সত্বেও এই সম্বোধনের পরিবর্তন হয়নি। উনি আমাকে " দাদা" বলেই ডেকেছেন, আর আমিও ওনাকে একটা বিশেষ নামে ডাকতাম।‌
** আমি একদিন বলেছিলাম, "যা না, একবার ব্যালকনিতে গিয়ে দুটো মিনিট দাঁড়া না। তোকে দেখতে পেলে মেয়েগুলো বর্তে যাবে। " সেদিন বোধহয় মুড খুব ভালো ছিল। আমার কথা শুনে মেয়েগুলোকে হাত নেড়ে অভিবাদন করে এলো। ওমা, এসেই আমার ওপর চোটপাট। " আজকে বলেছিস বলেছিস, ফারদার আর এরকম রিকোয়েস্ট করতে আসবি না। তাহলে মেরে তোর নাকমুখ ফাটিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেবো। " বলেই সেই নির্মল হাসির ফোয়ারা। " শ্রীমান পৃথ্বিরাজ " ছবির সফলতার পর " মৃণালিনী " সিনেমা হলের উল্টোদিকে" কেরালা রেস্টুরেন্ট "- এ আমাদের কয়েকজনকে খাইয়েছিলেন এখনও মনে আছে। এখন তো যেদিকে তাকাই, সবদিকে ফ্ল্যাট বাড়ি বা বহুতল ভবনের ছড়াছড়ি। কিন্তু সত্তর দশকে খুব কম লোকেরই সাধ্যে কুলোতো একটা ফ্ল্যাট বাড়িতে থাকার।‌ মহুয়া ঐ দশ বছরের মধ্যে তিন তিনটে ফ্ল্যাট বাড়িতে বাস করে গেছেন।
** ওনার কল্যাণে আমি বেশকিছু নামজাদা মানুষের সঙ্গে পরিচিত হবার সুযোগ‌ও পেয়েছিলাম। উৎপল দত্ত, বিকাশ রায়, অনুপকুমার, অলকা গাঙ্গুলি, তাপস পাল, মাধবী মুখোপাধ্যায়, সন্ধ্যা রায় প্রমুখ। একটা ঘটনার উল্লেখ করে প্রতিবেদন শেষ করবো। ১৯৭৯/৮০ সালের ঘটনা। একদিন হঠাৎ পিনাকী আমার বাড়িতে সকালে এলো। তখন আমি রীতিমতো কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারী, ডাক বিভাগের অন্তর্গত কলকাতা এয়ারপোর্ট সর্টিং ডিভিশন এ চাকরি করি। আগের রাতে নাইট ডিউটি করে বাড়িতে এসে শুয়ে আছি। পিনাকী এসে বললো, " আজ বিকেলে পাঁচটার সময় চলে আসবি।‌ বোন তোকে থাকতে বলেছে কিসব বলবে" । আমি তো গেলাম দেখি উনি ঘুমোচ্ছেন। প্রায় ছটা নাগাদ ঘুম থেকে উঠে ( গায়ে একটা কালো ফুল ছাপের নাইটি পরা) সোজা আমাকে পিটুনি। আমি বললাম " মারার জন্য ডেকে এনেছিস? ধুর, আমি চললাম। তোর চকলেট নে" । ওকে চকলেট খাওয়ানোটা আমার একটা কাজ ছিল। বললো " না রে, গায়ে হাত পায়ে একটু ব্যথা করছিল তোকে মেরে ঠিক করে নিলাম। আসলে কি জানিস আজকে সকালেই তো শিমুলতলা থেকে ফিরলাম তরু মামার ছবির শুটিং সেরে। ভাবলাম তোকে আগে গল্পটা বলে নেই। তাই ডেকেছি । তোর আজকে অফিস আছে নাকি? " আমি উত্তরে বলেছিলাম, ও এই ব্যাপার। তাহলে বলেই ফ্যাল শুনে নেই। " নিজের হাতে কফি বানিয়ে একটা প্লেটে করে চানাচুর ঢেলে সেন্টার টেবিলে রেখে দুম করে আমার গা ঘেঁষেই সোফায় বসে পড়লো। আমার শুধু এই ধাঁধাটা কোনোদিনই যাবে না যে, যে মেয়েটাকে আমি নিজের চোখে এতদিন স্টোভ বা গ্যাস ওভেন অন করে খাবার তৈরি করতে দেখেছি তাঁর মৃত্যু ওভাবে হ‌ওয়াটা যথেষ্ট আশ্চর্যের। যাক, তো সেদিন রাত দশটা পর্যন্ত ওঁর মুখে " দাদার কীর্তি " ছবির বহির্দৃশ্য ( outdoor) ) যেটা শিমুলতলাতে হয়েছিল তার গল্প শুনলাম। সেদিনের সন্ধ্যাটা ছিল আমার কাছে
" বিশেষ স্মরণীয় " । এই সৌভাগ্য কজনের হয়?
** বহু স্মৃতি জমা হয়ে আছে। পরে আবার কোনদিন বলবো খন।
অ্যাডমিন এই লেখাটা ভীষণ স্পর্শকাতর যা আমার জীবনে বাস্তব রূপে ছিল । অনুমোদন দিলে বাধিত হবো।

মহুয়া রায়চৌধুরীর 37তম মৃত্যুবার্ষিকীতে মহুয়া রায়চৌধুরীকে নিয়ে লিখলেন বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়

 ২২ জুলাই, বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়ের কাছে ভীষণ শোকের। ১৯৮৫ সালে এই দিন হারিয়ে গিয়েছিলেন মহুয়া রায়চৌধুরী। মহুয়ার সঙ্গে বিপ্লব বহু ছবি করেছেন। আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করতেই বিষণ্ণ গলায় বললেন, ‘‘মহুয়ার সঙ্গে পরিচিতি কি আজকের? অভিনয়ে আসার আগে থেকে ওর মাকে চিনতাম। মহুয়া তখন শিপ্রা। ওর মা টেলিফোনে চাকরি করতেন। খুব ভাল নাচ জানতেন। নানা জায়গায় মঞ্চানুষ্ঠান করতেন। মহুয়ার বাবাও জনপ্রিয় নৃত্যশিল্পী।’’


মহুয়ারা তখন দমদমের একটি আবাসনের বাসিন্দা। ছোট থেকে অভিনেত্রীও স্বাভাবিক ভাবেই নাচের তালিম নেন। পারদর্শীও হয়ে ওঠেন। তরুণ মজুমদারের ‘শ্রীমান পৃথ্বিরাজ’ তাঁর প্রথম ছবি। পরিচালকই তাঁর নাম বদলে রাখেন মহুয়া। প্রথম ছবিতেই নিজেকে প্রমাণ করেছিলেন অভিনেত্রী। ফলে, আর তাঁকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি, এমনই বক্তব্য বর্ষীয়ান অভিনেতার।

ব্যক্তি মহুয়া কেমন ছিলেন? বিপ্লবের কাছে প্রশ্ন ছিল আনন্দবাজার অনলাইনের। অভিনেতার কথায়, ‘‘মহুয়া ফুলের মতোই মিষ্টি ছিল। যেমন রূপ তেমনই প্রতিভা। আজও ওর তুলনা মহুয়া নিজেই। সারা ক্ষণ সবাইকে নিয়ে আনন্দে মেতে থাকত। কোনও ভণিতা ছিল না। শিশুদের ভীষণ ভালবাসত। ইন্ডাস্ট্রির দুঃস্থ কলাকুশলীর কত সন্তান যে মহুয়ার দেওয়া অর্থে পড়াশোনা করে বড় হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। রোজগারের একটা বড় অংশ ও অকাতরে দান করে দিত।’’ এ-ও জানিয়েছিলেন, একই সঙ্গে ভালবাসতেন কুকুর। স্টুডিয়োর সমস্ত কুকুর ওর পোষ্য। মহুয়া নিয়মিত তাদের খেতে দিতেন। যত্ন নিতেন। মহুয়ার দেহ যখন স্টুডিয়োয় নিয়ে আসা হয়েছিল ওরা সবাই এসে সার বেঁধে দাঁড়িয়ে। মাথা নীচু সবার। চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। উপস্থিত সবাই সে দিন বিস্মিত পথপশুদের শ্রদ্ধাজ্ঞাপন দেখে!

এমন প্রাণবন্ত শিল্পী এ ভাবে অকালে ঝরে গেলেন! বর্ষীয়ান অভিনেতার যুক্তি, মৃত্যু বলে আসে না। কোন রূপ ধরে আসবে কেউ জানে না। এবং মহুয়ার মৃত্যু যেহেতু বিতর্কিত তাই বিষয়টি নিয়ে তিনি কোনও কথাই বলবেন না। ওঁর চোখে মহুয়া এখনও হুল্লোড়ে মেতে ওঠা মিষ্টি একটি মেয়ে। যে নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াতে ভালবাসত। প্রায়ই সেটে সবার জন্য রান্না করে নিয়েও আসতেন। আর পরিবারে কোনও অশান্তি হলে? ‘‘তখন একটু চুপচাপ। হালকা বিষণ্ণ। সবার আড়ালে হয়তো চোখও ভিজে উঠত। কিন্তু কিছুতেই সেটা সবার সামনে প্রকাশ করত না মহুয়া’’, দাবি বিপ্লবের। তাই অভিনেত্রীর আকস্মিক প্রয়াণ আজও তাঁকে কষ্ট দেয়। বর্ষীয়ান অভিনেতার মতে, ‘‘অনেক বড় শিল্পী। খুব বড় মনের মেয়ে। আমার ভীষণ ভাল বন্ধু। ওর মৃত্যু আজও মেনে নিতে পারিনি।’’


সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

কমল বন্দোপাধ্যায়ের ফেসবুক পেজ থেকে মহুয়া রায়চৌধুরী সম্পর্কে

 কমল বন্দোপাধ্যায়ের ফেসবুক পেজ থেকে:- গতকাল ঠিক যেখানে শেষ করেছিলাম , ঠিক সেখান থেকেই শুরু করি । যে সময়ের কথা বলছি অর্থাৎ ...