আরেকটি নিষ্ঠুর 22 জুলাই - 2023

আরেকটি নিষ্ঠুর 22 জুলাই। মহুয়া তার হৃদয়ের গভীরে অনেক কষ্ট নিয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেল। অনেক কষ্ট যা মহিলার জন্য খুব বেশি ছিল এবং তাও সেই বয়সে যখন সাধারণত মহিলারা বিয়ে করে।




মহুয়া রায়চৌধুরী মারা যাওয়ার 38 বছর পেরিয়ে গেছে আজও বাঙালির স্মৃতিতে বেঁচে আছেন এই অভিনেত্রী। অভিনেত্রী প্রচুর প্রতিভা নিয়ে এসেছিলেন এবং কয়েক বছর ধরে বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পকে শাসন করেছেন। 


অভিনেত্রীর পাশের বাড়ির মেয়ে ইমেজ এবং তার অভিনয় প্রতিভা ছিল তার টিআরপি। সেই সময়ের মহুয়ার ভক্তরা এখন প্রবীণ। কিন্তু ঘটনা হল বর্তমান সময়ের তরুণরাও মহুয়ার ভক্ত। এর পিছনে জাদু কি?


সুচিত্রা সেন তার সময়ে ড্রিমগার্ল ছিলেন কিন্তু আজ এই অভিনেত্রীকে নিয়ে তেমন ক্রেজ দেখা যায় না। সুচিত্রা সেন দীর্ঘদিন ইন্ডাস্ট্রিতে ছিলেন কিন্তু 38 বছর আগে মহুয়া মারা যান এবং ইন্ডাস্ট্রিতে তার আয়ু খুব কম ছিল।


মহুয়া ম্যাজিক মূলত তার বোন ইমেজ এর জন্য। মহুয়া অবশ্যই অনেক পুরুষ ভক্তের ড্রিমগার্ল ছিল এবং তার অনেক মহিলা ভক্ত তার সৌন্দর্য পছন্দ করেছিল কিন্তু তার বেশিরভাগ ভক্ত তাকে তাদের বোন হিসাবে বিবেচনা করেছিল। তাই, তারা আজও তাদের বোনকে স্মরণ করে এবং মনে রাখবে।


বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় মহুয়া খুব নরম মনের এবং সে একজন ভালো মা ছিল। এমনও শোনা যায় যে তিনি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অনেক লোককে আর্থিকভাবে সাহায্য করেছেন। তিনি পশু প্রেমিক ছিলেন। এমন মহিলা খারাপ স্ত্রী হতে পারে না। সম্ভবত তিনি তার পরিবারের সদস্যদের জন্য অর্থ উপার্জনের মেশিন ছিলেন।


আশা করি মহুয়া ইতিমধ্যে একটি নতুন জীবন পেয়েছে এবং এটি তার আগের জীবনের সমস্ত কষ্টের ক্ষতিপূরণ করবে




মহুয়া রায়চৌধুরীর অসুখী বিবাহিত জীবন নিয়ে বিপ্লব চ্যাটার্জি

 বিপ্লব চট্টোপাধ্যায় তাঁর স্পষ্ট বক্তব্যের জন‍্য প্রবাদপ্রতিম। আপনি ওনার কথা পছন্দ করতে পারেন, না পারেন – কিন্তু অগ্রাহ্য করতে পারবেন না। আজও মনে পড়ছে ,  বছর দুয়েক আগে গৌতম ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় ' তারাদের শেষ তর্পণ ' অনুষ্ঠানে ওনার বাষ্পরুদ্ধ কন্ঠে মহুয়া রায়চৌধুরীর স্মৃতিচারণ। শুনতে শুনতে অজান্তেই চোখের কোল বেয়ে জলের ধারা নেমেছিল।

               আপনাদের মধ‍্যে বিশাল সংখ‍্যক মানুষ বিপ্লব চট্টোপাধ‍্যায়কে জানতে ও তাঁর কাছ থেকে মহুয়া রায়চৌধুরীর কথা শুনতে নিশ্চিতভাবেই ভীষণ আগ্রহী। তাঁরা সংগ্রহে রাখতে পারেন এই বইটি। বইটি সংগ্রহ করার জন‍্য ফোন নম্বরও দেওয়া আছে।



সৌন্দর্য ও রূপচর্চা নিয়ে মহুয়া রায়চৌধুরীর অনবদ্য বিশ্লেষণ

 সেই সময়ের পত্রিকায় সৌন্দর্য ও রূপচর্চা নিয়ে মহুয়া রায়চৌধুরীর অনবদ্য বিশ্লেষণ। এখনকার নায়িকারা একটু এইসব জানলে বাংলা ছবি বাঁচান বলে থেকে থেকে স্লোগান তুলতে হত না। দর্শক স্বতঃপ্রণোদিত ভাবেই বাঁচিয়ে রাখত।





মহুয়ার ৫ম মৃত্যুবার্ষিকীতে তিলক যা বললেন

 মহুয়া রায়চৌধুরীর মৃত্যুর পর, তার স্বামী তিলক চক্রবর্তী ধীরে ধীরে চলচ্চিত্র শিল্প থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। শোনা যায়, ব্যাঙ্কের চাকরি, গান আর ছেলে তমালকে ঘিরেই তাঁর জীবন আবর্তিত হয়।

এমনও শোনা যায়, মৃত্যুর আগে মহুয়া ইন্ডাস্ট্রিতে তার সেরা বন্ধু রত্না ঘোষালকে তার ছেলের দায়িত্ব নিতে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু ঘটনা হল তমাল তার বাবার সাথে ছিল এবং তিলক আর বিয়ে করেনি।

মহুয়ার ৫ম মৃত্যুবার্ষিকীতে তিলক যা বলেন একটি খবরের কাগজে।





ইস্টবেঙ্গলের প্রতি মহুয়া রায়চৌধুরীর ভালোবাসা - প্রতিবেদক রবি বসুর বক্তব্য থেকে নেওয়া

 মহুয়া রায়চৌধুরী ছিলেন ইস্ট বেঙ্গল ফুটবল ক্লাবের একজন ডাই হার্ড ফ্যান। রবি বসুর বইতে মহুয়ার অনেক ঘটনা রয়েছে এবং এই নিবন্ধটি সেই বই থেকে নেওয়া হয়েছে।



"ফুটবল খেলাটাকে প্রচন্ড ভালোবাসত মহুয়া। একদম ছোটবেলা থেকেই। ওর দাদা পিনাকী যখন বন্ধুদের নিয়ে ফুটবল খেলতে যেত , তখন মহুয়াও তাদের পেছন পেছন যেত মাঠে। কেবল দর্শক হিসেবেই নয় , প্লেয়ার কম পড়লে নিজে মাঠে নেমে পড়ে গোলে দাঁড়িয়ে যেত। সেখান থেকেই চিৎকার করে বিপক্ষের খেলোয়াড়দের শাসাত : এই , আমার গোলের দিকে জোরে বল মারবে না বলে দিচ্ছি। আমাকে গোল দিয়ে দিলে তোমাদের সঙ্গে রক্তারক্তি হয়ে যাবে কিন্তু। স্বপক্ষ আর বিপক্ষ উভয় দলের খেলোয়াড়রাই মহুয়ার কথা শুনে হেসে ফেলত।

যেদিন মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের খেলা থাকত , মহুয়া সেদিন সকাল থেকেই খুব টেনশনে ভুগত। কাজেকর্মে ভালো করে মন বসাতে পারত না। সেদিন স্টুডিওতে এসেই ডিরেক্টারকে বলত : আমাকে লাঞ্চের আগে যত পার খাটিয়ে নাও। বিকেলের দিকে খেলা আরম্ভ হলে আমাকে দু'ঘন্টা ছুটি দিতে হবে। ওই সময় আমি খেলা দেখব।
মহুয়াদের একটা ট্রানজিস্টার টিভি ছিল। হাত দুয়েক লম্বা সরু মতন। স্ক্রিনটা বোধহয় ছ'ইঞ্চি বাই ছ'ইঞ্চি হবে। ব্যাটারিতে চলত। তিলক অফিস যাবার সময় ওই টিভি-টা মহুয়াকে দিয়ে যেত। মহুয়া সেটাকে মেক-আপ রুমে কাজের মেয়েটির কাছে রেখে দিত। আমি স্টুডিওতে গিয়ে হাজির হলে বলত : এই রবিদা, আজ আমাদের টিমকে হারাবার চেষ্টা করবে না বলে দিচ্ছি। আমাদের টিম যদি হারে তাহলে তোমার সঙ্গে একচোট হয়ে যাবে কিন্তু।

আমি হাসতে হাসতে বলতাম : আজ তোমাদের টিম হারবেই। আমি আসবার সময় কালীঘাটে মোহনবাগানের হয়ে পাঁচসিকে পূজো দিয়ে এসেছি।

মহুয়া বলত : আমিও দক্ষিণেশ্বরের মায়ের কাছে আড়াই টাকা মানত করে রাখলাম। দেখি তোমরা ইস্টবেঙ্গলকে কেমন করে হারাও।
এইরকম নানা হাসি-ঠাট্টার মধ্যে দিয়ে মহুয়া তার টেনশন কাটাবার চেষ্টা করত। কিন্তু যত বেলা গড়াত ততই তার মুখটা শুকিয়ে যেত। মাঝে মাঝে বলত : কী হবে বলো তো রবিদা ?

আমি ওকে সান্ত্বনা দেবার জন্যে বলতাম : এই মউ, ব্যাপারটাকে এত সিরিয়াসলি নিচ্ছিস কেন বল তো ! খেলাটা তো স্পোর্টস। এটাকে স্পোর্টিংলি নিতে পারিস না ? যারা ভালো খেলবে তারা জিতবে।

মহুয়া মুখ শুকনো করে বলত : না গো রবিদা, ইস্টবেঙ্গল হেরে গেলে বুকের ভেতর যে কী কষ্ট হয় তা তোমাকে বোঝাতে পারব না।
সব থেকে দুঃখের ব্যাপার সেদিন ইস্টবেঙ্গল সত্যিই হেরে গেল। মেক-আপ রুমে বসে ওরই টিভিতে আমরা দুজনে খেলাটা দেখছিলাম।
ইস্টবেঙ্গল হেরে যাবার পর মহুয়ার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে সে কি কান্না ! তখন মনে হচ্ছিল মোহনবাগান হেরে গেলেই বোধহয় ভালো হত। অনেক কষ্টে সেদিন ওর কান্না থামাতে পেরেছিলাম।
আজও যখন টিভিতে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের খেলা দেখি তখন মহুয়ার কথা বড্ড বেশি করে মনে পড়ে যায়। সে যেখানে গেছে সেখান থেকে কি খেলা দেখা যায় ?"

কমল বন্দোপাধ্যায়ের ফেসবুক পেজ থেকে মহুয়া রায়চৌধুরী সম্পর্কে

 কমল বন্দোপাধ্যায়ের ফেসবুক পেজ থেকে:- গতকাল ঠিক যেখানে শেষ করেছিলাম , ঠিক সেখান থেকেই শুরু করি । যে সময়ের কথা বলছি অর্থাৎ ...